বিবাহ সম্পাদন বা নিবন্ধনকালে নারী বা পুরুষ কারো বয়স আইনে নির্ধারিত বয়সের চেয়ে কম হলে সে বিয়ে বাল্যবিবাহ হিসেবে গণ্য। নারী বা পুরুষ যার ক্ষেত্রেই ঘটুক না কেন, বাল্যবিবাহ মানবাধিকারের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি শিশুদেরকে কখন এবং কাকে বিয়ে করবে সে অধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত করে। সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ ১৯৪৮ তে বিবাহের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায়, পূর্ণ সম্মতি দানের অধিকারকে স্বীকার করে বলা হয়েছে, ‘একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ব্যক্তিকে অবশ্যই মানসিকভাবে পরিপক্ক হতে হবে।’
২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৫, ৩, ১ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০২০, ২০২৫ এবং ২০৩০ সালে ১৮ বছরের কমবয়সী নারীদের বিবাহের হার যথাক্রমে ৩০, ২০ ও ১০ শতাংশ সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস (বিবিএস) কর্তৃক প্রকাশিত এসবিআরএস ২০২৩ (স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম) অনুসারে ১৮ বছরের কমবয়সী নারীদের বাল্যবিবাহের হার ২০১৯, ২০২০, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে যথাক্রমে ৪১ দশমিক এক, ৩১ দশমিক তিন, ৩২ দশমিক চার, ৪০ দশমিক নয় এবং ৪১ দশমিক ছয় শতাংশ ছিল। বিবিএস পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালে আমাদের দেশে বাল্যবিবাহের হার হ্রাস পায়নি। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ সম্পর্কিত ইউনিসেফের ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুসারে বাল্যবিবাহের হার (প্রিভেলেন্স) ৫১ শতাংশ এবং বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বাধিক বাল্যবিবাহ সম্পন্ন হয় এমন ১০টি দেশের একটি।
ব্রিটিশ আমলে প্রবর্তিত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ১৯২৯ বালাদেশে বাল্যবিয়ে রুখতে অকার্যকর হয়ে পরে ছিল। সরকার এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অংশীজনদের সাথে দীর্ঘ আলাপ, আলোচনার পর ১৯২৯ সালের আইনটিকে রদ করে বাল্যবিবাহ নিরসনের জন্য বর্তমান সময়ের চাহিদার নিরিখে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ প্রবর্তন করে। এই আইন অনুসারে বিবাহের ক্ষেত্রে ২১ বৎসর পূর্ণ করেননি এমন কোনো পুরুষ এবং ১৮ বৎসর পূর্ণ করেননি এমন কোনো নারী অপ্রাপ্তবয়স্ক। যে বিবাহের ক্ষেত্রে কোনো একপক্ষ বা উভয়পক্ষ অপ্রাপ্তবয়স্ক সে বিবাহটি বাল্যবিবাহ। আইনটি প্রণয়নের এক বৎসরের মধ্যে তা বাস্তবায়নের জন্য বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা, ২০১৮ প্রণয়ন ও প্রকাশ করা হয়। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের জন্য জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বাল্যবিয়ে নিরসনের জন্য ছাত্রছাত্রী, কিশোর-কিশোরী, অভিভাবকদের সচেতন করার জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। পত্রপত্রিকায় প্রতিদিনই বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য মাঠ পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, জেল-জরিমানা, মুচলেকা গ্রহণের সংবাদ দেখা যায়। কিন্তু বিবিএস ২০১৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৮ বছরের কম বয়স্ক নারীদের বিবাহের যে চিত্র তুলে এনেছে তাতে বাল্যবিবাহ নিরোধে গৃহীত কার্যক্রম ইপ্সিত ফল বয়ে নিয়ে এসেছে, একথা বলা যায় না। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অনুযায়ী বাংলাদেশকে ২০২৫ ও ২০৩০ সালের জন্য নির্ধারিত বাল্যবিয়ের হারে পৌঁছানোর জন্য এ পর্যায়ে গৃহীত কার্যক্রমগুলো পর্যালোচনা করে বিকল্প পন্থা নিয়ে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন।
বাল্যবিবাহের কারণসমূহ: আমাদের দেশে নারীদের বাল্যবিবাহের উচ্চ হারের জন্য গতানুগতিকভাবে বহুবিধ কারণকে দায়ী করা হয়। মোটাদাগে এই কারণগুলো হলো নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা। এ ছাড়া বিবাহ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণে পরিবারে পুরুষদের প্রাধান্য, স্থানীয় প্রথা, কুসংস্কার, সুন্দরী নারী, টিজিং, লেখাপড়ায় অমনোযোগ, লেখাপড়া করে না, নদীভাঙ্গা পরিবার, এতিম, পাত্র বিদেশে থাকে, পাত্র ভালো চাকরি করে, প্রেমিকের সাথে বিবাহের জেদ ধরা, পুরুষ নারীকে অশোভন অবস্থায় পাওয়া, প্রেমিকের সাথে পালানো এগুলোকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সাম্প্রতিককালে এর সাথে করোনা (কোভিড) ও স্মার্ট ফোনে আসক্তি যোগ হয়েছে।
গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট কর্তৃক ২০১৬ সালে প্রকাশিত ‘উদ্ভাবনী উপায়ে বাল্যবিবাহ নিরোধ’ শীর্ষক বইতে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের কারণ হিসেবে, বিবাহের সহজ পদ্ধতি, বিবাহ সম্পাদিত হলে বয়সের কারণে তা বাতিল না হওয়া, বিবাহের সময় কাগজ-পত্রাদি যাচাই ও সংরক্ষণ না করা, বিবাহের একটি বড় অংশ নিবন্ধিত না হওয়া, সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত বিবাহ পড়ানোয় সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গকে সচেতন বা মনিটর না করা, এফিডেভিট ও কোর্ট ম্যারেজের বিষয়ে ভুল ধারণা এবং বিবাহকে সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান মনে করাকে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ তে বাল্যবিবাহ নিরোধের জন্য বর্ণিত ব্যবস্থাদি বিশ্লেষণ করে বাল্যবিবাহের যে সকল কারণ দেখা যায়, সেগুলো হচ্ছে-বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও বন্ধের ব্যবস্থা না থাকা, পিতামাতাসহ অন্যান্য ব্যক্তির বাল্যবিবাহ সম্পন্নে ভূমিকা রাখা, বিবাহ সম্পদানকারী কর্তৃক বাল্যবিবাহ সম্পাদন, বিবাহ সম্পাদন ও নিবন্ধনের সময় পাত্রপাত্রীর বয়স প্রমাণের জন্য নির্ধারিত দলিলাদি পরীক্ষা না করা।
বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও বন্ধে স্থানীয় পর্যায়ে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের মাধমে গতি আনয়ন: বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭-এর ৩ ধারা এবং তদধীন প্রণীত বিধিতে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে জাতীয়, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জন প্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তি সমন্বয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এতদ সংক্রান্ত বিধিতে জাতীয়, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন কমিটিতে কে বা কারা থাকবেন এবং কমিটির কার্যাবলীও উল্লেখ করা হয়েছে। ইউনিয়ন কমিটি হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ের। ইউনিয়ন কমিটিতে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সকল সদস্য, নিকাহ রেজিস্ট্রার, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার শিক্ষক, এনজিও প্রতিনিধি ও ইউনিয়ন পরিষদের সচিব রয়েছেন। একটি ইউনিয়ন কমিটির ন্যূনতম সদস্য সংখ্যা ১৯ জন। তারা জালের ন্যায় ইউনিয়নের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। একটি ইউনিয়নে গড়ে ২৫ হাজার লোক বসবাস করে। তার মধ্যে কোনো অভিভাবক তার সন্তানকে অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিয়ে দেওয়ার পায়তারা করছে বা কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিয়ে করতে চায় তা স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, শিক্ষক, গ্রাম পুলিশের অজানা থাকার কথা নয়। তাদের অগোচরে কোনো বাল্যবিয়ে অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। কখনো কখনো আমরা পত্রিকায় দেখতে পাই যে কোনো কোনো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বাল্যবিয়ে সম্পাদনে সহায়তা করছেন। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও বন্ধে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ তে বর্ণিত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব বিষয়ে সম্যক অবগত থাকলে কোনো জনপ্রতিনিধি বাল্যবিয়ের সহায়ক না হয়ে তা প্রতিরোধ করতেন। ইউনিয়ন কমিটির সদস্যগণকে তাদের করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করা হলে তারা স্ব-স্ব এলাকায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসবেন। তারাই বিবাহ নিবন্ধক, বিবাহ সম্পাদনকারীর সাথে সংযোগ স্থাপন করে বাল্যবিয়ে প্রতিহত ও বন্ধ করবেন।
প্রতিদিনই বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখা যায় যে, বাল্যবিয়ে অনুষ্ঠানের সংবাদ পেয়ে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন সেগুলো ভেঙ্গে দেয়, কখনো বাল্যবিয়ে প্রদান করবে না মর্মে মুচলেকা নেয়, আবার কখনো বাল্যবিয়ে সংঘটিত হলে জেল, জরিমানা আরোপ করে। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের এ সংবাদ প্রাপ্তি একটি বিছিন্ন বিষয়। ইউনিয়ন কমিটি বা তার কোনো সদস্য সম্ভাব্য বাল্যবিয়ে অনুষ্ঠানের খবর উপজেলা প্রশাসনকে দিচ্ছেন, তেমনটি সচরাচর দেখা যায় না। বিচ্ছিন্নভাবে সংবাদ পেয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের পদ্ধতিটি যে ফলপ্রসূ নয় তা বিবিএসের ডাটা থেকেই বুঝা যায়। কার্যকর নেটওয়ার্ক থাকলে ২০১৯, ২০২০, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে যথাক্রমে ৪১ দশমিক এক, ৩১ দশমিক তিন, ৩২ দশমিক চার, ৪০ দশমিক নয় এবং ৪১ দশমিক ছয় শতাংশ বাল্যবিয়ে সংঘটিত হতে পারত না। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও বন্ধের জন্য ইউনিয়ন কমিটিকে সক্রিয় করার পাশাপাশি ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা কমিটির সাথে সংযোগ নিবিড় করতে হবে।
প্রাপ্ত বয়স্ক নিশ্চিত হয়ে আইনানুগ বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য বিবাহ নিবন্ধক-সম্পাদনকারীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মনিটরিং: বিবাহ নিবন্ধনের জন্য সরকার থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তি হচ্ছেন বিবাহ নিবন্ধক। বিবাহ নিবন্ধক ৬৫ বৎসর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত পদে বহাল থাকতে পারেন। শুধুমাত্র বিবাহ সম্পাদন বা পড়াতে পারেন এমন ব্যক্তিবর্গ সরকার থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত নন। তবে এদের দ্বারা বিবাহ সম্পাদন আইনে স্বীকৃত। সচরাচর দেখা যায় যিনি একবার বিবাহ সম্পাদন শুরু করেছেন তিনি দীর্ঘকাল এ কাজটি করে থাকেন। বিবাহ নিবন্ধক বা সম্পাদক না চাইলে বাল্যবিয়ে অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। কেউ কেউ অনেক সময় বলে থাকেন যে, যারা সন্তানদের বাল্যবিয়ে দিয়ে থাকেন তারা অন্য এলাকায় গিয়ে বিয়ে সম্পাদন করে আসেন। বাংলাদেশের যে কোনো এলাকাতেই যাওয়া হোক না কেন বিয়ের নিয়ম অভিন্ন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের এক তথ্য অনুসারে ২০১৬ সালে বিবাহ সম্পাদনকারী ও নিবন্ধকের সংখ্যা প্রায় আশি হাজার। ঘুরেফিরে এরাই বিবাহ সম্পাদন করেন। এদেরকে দক্ষ, সচেতন, মনিটর করা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ। এ গ্রুপকে দক্ষ, সচেতন ও নিয়মিত মনিটর করে বাল্যবিয়ে পড়ান থেকে বিরত রাখা গেলে দীর্ঘমেয়াদী সুফল পাওয়া সম্ভব। মুসলমানদের ক্ষেত্রে সখ করে মুরুব্বী স্থানীয় কাউকে কখনো কখনো বিয়ে পড়াতে দেখা যায়। তবে ইহা সামগ্রিক বিয়ে ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার মতো হারে নয়।
বিয়ে সম্পাদন একটি আইন স্বীকৃত কার্যক্রম। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ৯ ধারা অনুসারে যখনই কেউ বিয়ে সম্পাদন করবেন তখনই তিনি আইনের আওতায় আসবেন। সুতরাং যে ব্যক্তি বিয়ে পড়াবেন তাকে এতদ সংক্রান্ত আইন ভালোভাবে জানতে হবে। মুসলিম তালাক ও বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৯ তেও বিবাহ সম্পাদনকারীদের স্বীকৃতি রয়েছে। মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০০৯-এর বিধি ২২(৩) অনুসারে ‘নিকাহ রেজিস্ট্রার ব্যতীত অন্য কেহ বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করিলে, উক্ত ব্যক্তি বিবাহের ১৫ দিনের মধ্যে উক্ত এলাকার নিকাহ রেজিস্ট্রারকে অবহিত করিবেন এবং এইরূপ ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি নিকাহ পড়াইয়াছেন তিনি নিকাহ নিবন্ধনের জন্য রেজিস্ট্রাওে যে সকল ব্যক্তির স্বাক্ষও প্রয়োজন তাহাদেরকে সঙ্গে লইয়া সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিস্ট্রারের নিকট হাজির হইবেন।‘ বাস্তবে এ বিধির কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হয় না। যারা মৌখিক বিবাহ পড়িয়ে থাকেন তাদের মধ্যে এ প্রবণতা দেখা যায় না, ইহা তারা জানেন বলেও মনে হয় না। এ বিধিটি পরিপালন করা হলে বিবাহ সম্পাদনকারীগণের দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে। তারা চিন্তা-ভাবনা করে বিবাহ সম্পাদন করবেন। বাল্যবিয়ের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে।
২০১৭ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ১২ ধারায় বলা হয়েছে যে, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ বা আবদ্ধ হইতে ইচ্ছুক নারী বা পুরুষের বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা সমমানের পরীক্ষার সার্টিফিকেট, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা সমমানের পরীক্ষার সার্টিফিকেট, প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট বা সমমানের পরীক্ষার সার্টিফিকেট অথবা পাসপোর্ট আইনগত দলিল হিসেবে বিবেচিত হইবে।
বিবাহ নিবন্ধক ও সম্পাদনকারীগণ পেশাগতভাবে সুদক্ষ হলে এবং তাদের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করা হলে তারা বয়স প্রমাণের কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই করে নিবেন। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে যত ধরনের সচেতনতার কার্যক্রম নেওয়া হোক না কেন এবং বিয়ে অনুষ্ঠানের পরে জেল-জরিমানা যাই করা হোক, কোনোভাবে একটি বিয়ে অনুষ্ঠিত হলে বয়সের কারণে তা অবৈধ বা বাতিল হবে না। এ কারণেই সামগ্রিক বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কর্মকাণ্ডে বাল্যবিয়ে অনুষ্ঠিত হতে না পারে তা নিশ্চিত করা তথা আইনানুগভাবে বিয়ে অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা মুখ্য বিষয়। আর একমাত্র বিয়ে সম্পাদনকারী ও নিবন্ধকগণ তা নিশ্চিত করতে পারেন। এজন্য বিয়ে সম্পন্ন ও নিবন্ধনে এদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও যথাযথ মনিটরিং প্রয়োজন।
ব্যয়বহুল পথ পরিহার করে ব্যয় সাশ্রয়ী পথে অগ্রসর হওয়া: বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে ফ্রন্ট লাইনে বড় দাগে দুটি পক্ষ দেখা যায়। একদিকে বিয়ে প্রতিরোধ, সম্পাদনকারী ও বিবাহ নিবন্ধক, অপরদিকে বিবাহ ইচ্ছুক অপ্রাপ্ত বয়স্ক, তাদের পিতামাতা ও অভিভাবক। বাংলাদেশে ১০+ থেকে ২০ বৎসর বয়সের জনসংখ্যা তিন কোটি। ১৮ বছরের কম বয়স্ক নারী ও ২১ বছরের কম বয়স্ক পুরুষের সংখ্যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। প্রতিবছর প্রায় ৩০ লাখ নর-নারী এই বয়স গ্রুপ থেকে বের হয় এবং সম সংখ্যক যোগ দেয়। এখানে সর্বনিম্ন ১০-১১ বছরের নারী শিশুর বিয়ে হতে দেখা যায়। ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মধ্যেই বাল্যবিয়ে রয়েছে। সুতরাং নারী শিশুকে যদি বাল্যবিয়ের হাত থেকে বাচাতে হয়, তা হলে ১০-১১ বছর থেকে শুরু করে ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেককেই সচেতন করতে হবে, মনিটর করতে হবে। প্রতিবছরই নতুন নতুন নারী শিশু যোগ হবে অর্থাৎ ভেরিয়েবল বিধায় এদের সচেতন কার্যক্রম বছরের পর বছর ধরে চালাতে হবে। কোনো একটি নির্ধারিত সময়ে ১০-১১ থেকে ১৮ বছরের কম বয়সি নারী শিশুদের সচেতন করে কার্যক্রম শেষ করা যাবে না। কারণ প্রতিদিনই ব্যাপক সংখ্যক নারী শিশু বিয়ের ঝুঁকিতে প্রবেশ করে। শিশদের পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতন ও মনিটর করা বিশাল, জটিল, ব্যয়বহুল কার্যক্রম এবং প্রকৃতপক্ষে মনিটরিং অসম্ভব। অথচ বাল্যবিয়ে রোধের জন্য এ দিকেই বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।
পক্ষান্তওে বিয়ে সম্পাদন ও নিবন্ধনকারীর সংখ্যা শিশু, কিশোর, অভিভাবকদের চেয়ে অনেক কম। এদেরকে দক্ষ, সচেতন, মনিটর করা তুলনামূলকভাবে অনেক সহজ। এ গ্রুপকে দক্ষ, সচেতন ও নিয়মিত মনিটর কর বাল্যবিয়ে পড়ান থেকে বিরত রাখা গেলে দীর্ঘমেয়াদী সুফল পাওয়া যাবে। অথচ বাল্যবিয়ে নিরোধ কার্যক্রমে এদেরকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সুতরাং বাল্যবিয়ে ঠেকানোর স্থানটি দুর্বল তথা অরক্ষিত থেকে গেছে।
উদ্ভাবনী উপায়ে কোনো সমস্যার সমাধান বলতে বুঝায় কম ব্যয়ে, স্বল্প সময়ে, মানুষের ভোগান্তি ব্যতিরেকে, মানসম্মত, টেকসই সমাধান। বাল্যবিয়ের টেকসই সমধান করার জন্য বিয়ে প্রতিরোধ, নিবন্ধন ও সম্পাদনে সম্পৃক্তদেও ভূমিকা সর্বাধিক। এ জন্যে এ ক্ষেত্রে ভেরিয়েবল ফেক্টরদের চেয়ে কন্সট্যান্ট ফেক্টরস অর্থাৎ বিয়ে নিবন্ধক, সম্পন্নকারী ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে দায়িত্ব প্রাপ্তদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অধিক গুরুত্ব ও মনোযোগ দিতে হবে। বিয়ে প্রতিরোধ, নিবন্ধন ও সম্পাদনে নিয়োজিতদেও সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। অধিকন্তু, তারা দীর্ঘকাল এ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। এদেরকে বিবাহ সম্পর্কিত আইন কানুন শিখানো হলে দীর্ঘমেয়াদে সুফল পাওয়া যাবে। বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে থাকা পাত্রপাত্রীর তুলনায় বিবাহ প্রতিরোধ ও সম্পাদনকারীর সংখ্যা কম বিধায় স্বল্প সময়ে, কম খরচে এদের দক্ষ করা যাবে। মনিটরিং ও সহজ হবে।
বিশেষ বিধানের প্রয়োগ করা: বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭-এর ১৯ ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোন বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং পিতা-মাতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে, বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।
সুতরাং বাল্যবিবাহের উচ্চ হারের জন্য যে সকল কারণকে দায়ী করা হয়, তার কোনোটি যদি অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে হয়ে থাকে, তবে সে ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ নিয়ে বিবাহ সম্পাদন ও নিবন্ধন করলেই তো সেটি আর বাল্যবিয়ে গণ্য হবে না এবং তা অপরাধ হবে না।
বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধি ২০১৮ অনুসারে অপ্রাপ্ত বয়স্কের বিবাহের আদেশ প্রাপ্তির জন্য উপযুক্ত আদালতে উভয়পক্ষের পিতামাতা/আইনগত অভিভাবক বা প্রযোজ্যক্ষেত্রে অপ্রাপ্ত বয়স্কসহ উভয়পক্ষ অথবা বিবাহের পাত্রপাত্রী উভয়ে যৌথ আবেদন কারণ উল্লেখপূর্বক করতে পারবে। আদালত আবেদনটির সত্যতা যাচাইয়ের নিমিত্ত সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে গঠিত যাচাই কমিটিতে প্রেরণ করবেন। যাচাই কমিটি অনধিক ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করিবেন।
যাচাই কমিটি ধর্ষণ, অপহরণ, জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন এবং ধর্ষণ, অপহরণ জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন বিষয়ে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে কোনো মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকলে নির্ধারিত বয়সসীমার পূর্বে বিবাহ সম্পাদন না করার বিষয়ে মতামত প্রদানপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে অনুসন্ধান করে বিবাহটি অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে এবং সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে হচ্ছে মর্মে নিশ্চিত হলে নির্ধারিত বয়সসীমার পূর্বে আবেদিত বিবাহের বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামতসহ উপযুক্ত আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
অপ্রাপ্ত বয়স্কের বয়স যাই থাকুক না কেন এই আইনের আওতায় আদালতের অনুমতিক্রমে বিবাহ সম্পাদিত ও নিবন্ধিত হলে সে বিবাহকে বাল্যবিবাহ বলা যাবে না। সুতরাং যে সকল কারণে পূর্বে বাল্যবিবাহ সম্পাদন করা হতো সেগুলো অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে হলে বর্তমান আইন অনুযায়ী আদালতের অনুমতিক্রমে বৈধভাবে সম্পাদন করার সুযোগ রয়েছে। আইনে প্রদত্ত সুযোগ না নিয়ে এখনো কেন বাল্যবিবাহ সম্পাদিত হচ্ছে? পত্রপত্রিকায় প্রায় প্রতিদিনই বাল্যবিবাহ সম্পাদনের খবর থাকে। এর উত্তর হচ্ছে, বিবাহ সম্পাদনকারীগণ আইনের এই ধারাটি বিষয়ে সম্যক অবগত নন এবং তদারকির অভাবে তারা পূর্বেও ন্যায় বিয়ে পড়িয়ে থাকেন।
বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ পাশ হওয়ার পরে এমন কোনো সংবাদ আমার নজরে পরেনি যে আদালতের কাছে অপ্রাপ্ত বয়স্কের বিবাহ সম্পাদনের আবেদন আদালত ব্যাপক হাওে নাকচ করে দিয়েছে বা অনিস্পন্ন রেখেছে বা যাচাই কমিটি বিলম্বিত করেছে। বরং দেখা গেছে যে বরিশাল এবং ঝিনাইদহ জেলা থেকে একটি কওে আদালতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিবাহ সম্পাদনের আবেদন দাখিল এবং যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে তা আদালত অনুমোদন করেছে।
পূর্বে যে সকল কারণে বাল্যবিবাহ সম্পাদিত হতো বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ পাশ হওয়ার পরে তার কোনো কারণে বিয়ে সম্পাদন অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে অপরিহার্য হলে আদালতের অনুমতিক্রমে তা সম্পাদন করা যায়। বিবাহ সম্পাদনকারী ও নিবন্ধকগণ আইনের এই বিশেষ বিধানের প্রয়োগ বিষয়ে দক্ষ হলে উপর্যুক্ত আদালতের আদেশ ব্যতীত মানবিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক বা অন্য কোন কারণ দেখালেও তারা আবেগে অভিভূত হয়ে পূর্বের ন্যায় বাল্যবিয়ে পড়ানো বা নিবন্ধনে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করবেন না মর্মে আশা করা যায়।
শিক্ষা ও দারিদ্র্য বিমোচনে উন্নতিকে পজিটিভভাবে তুলে ধরা: উচ্চ বাল্যবিয়ের হারের জন্য নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতাকে গতানুগতিকভাবে মোটাদাগে দায়ী করা হচ্ছে। অথচ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে শিক্ষার হার ছিল ১৮ শতাংশ এবং দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী জনসংখ্যার হার ছিল ৮০ শতাংশের অধিক। পক্ষান্তরে ২০২৩ সালে বাংলাদেশে শিক্ষার হার ৭৭ দশমিক নয় শতাংশে উন্নীত হয়েছে এবং ২০২২ সালে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী জনসংখ্যার হার ১৮ দশমিক সাত শতাংশ নেমে এসেছে। বিগত ৫০ বছওে দুটি প্যারামিটারে অভূতপূর্ব উন্নতি এবং তার যে পজিটিভ ইমপ্যাক্ট বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে পড়ার কথা তাকে বেমালুম চেপে যাওয়া হচ্ছে। কোনো রকম তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ব্যতিরেকে এখনো দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতাকে উচ্চ বাল্যবিবাহের জন্য দায়ী করা হচ্ছে। বাল্যবিয়ে নিরোধ সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখালেখি, আলোচনায় শিক্ষা ও দারিদ্র্য বিমোচনের উন্নতিকে তুলে ধরে এর সুফল বাল্যবিয়ে রোধের জন্য নিতে হবে।
বিবাহ ব্যতিরেকে নারী পুরুষের একত্রে বসবাসে সমাজের বাঁধা: অনেক দেশ বা সমাজে নারী পুরুষ বিবাহ ব্যতীত একত্রে বসবাস করে থাকে। তারা সন্তান জন্ম দেয়। আবার ইচ্ছে হলে দীর্ঘকাল একত্রে বসবাসের পরে বিবাহ করে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থা বিবাহ ব্যতিরেকে নারী পুরুষের একত্রে বসবাস মেনে নেয় না। অবিবাহিত নারী পুরুষের মধ্যে কোনোরূপ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে মর্মে ধারণা হলেই বিবাহের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এ সামজিক চাপের একটি ভালো দিক হল, বিবাহ ব্যতীত নারী পুরুষের একত্রে বসবাস করা প্রায় অসম্ভব। সুতরাং একত্রে বসবাস করতে চাইলে নারী পুরুষকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়। এ ক্ষেত্রে দুটি পক্ষের কোনো একটি পক্ষ অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে যে কোনো উপায়ে বিয়ে নিশ্চিত করতে চায়। বিবাহ সম্পাদনকারী ও বিবাহ নিবন্ধকের জন্য এটি স্ট্রেংথ। তারা এক্ষেত্রে কড়াকড়িভাবে আইন অনুসরণ করলে সম্ভাব্য পাত্রপাত্রী হয় প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে অথবা আদালতের অনুমতি নিয়ে বিবাহ সম্পাদন করবে। আদালতের অনুমতি নিয়ে বিবাহ সম্পাদন সহজ ব্যাপার নয়। এ জন্যে তারা বিবাহ সম্পাদনকারীদেরকে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে তাদের মাধমে বিয়ে পড়ান নিশ্চিত করতে চায়। বাল্যবিবাহ রোধে বিবাহ সম্পন্নকারিদের জায়গাটি হচ্ছে সবচেয়ে দুর্বল। মনিটরিং ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই দুর্বলতা দূর করে বিয়ে সম্পাদনের স্থানটি ত্রুটিমুক্ত ও সবল করা হলে আইনবহির্ভূত বিয়ে অনুষ্ঠানের চাপ তারা সহজেই মোকাবেলা করতে পারবে।
উপসংহার: নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, নারীর সম অধিকার নিশ্চিতকরণ ও বাল্যবিয়ে রোধে সম্পৃক্ত, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের প্রচলিত কার্যক্রমে বিয়ে সম্পাদন ও নিবন্ধনে নিয়োজিতদেরসহ ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, উপজেলা এবং জেলা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির সদস্যগণকে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭, বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধি ২০১৮, মুসলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন আইন, ১৯৭৪, এতদসংক্রান্ত বিধি ২০০৯, খ্রিস্টান ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৮৭২, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট, ১৮৭২ এবং হিন্দু বিবাহ আইন ২০১২-এর প্রয়োগ বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। বাল্যবিবাহ রোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানসমূহের বিবাহ সম্পর্কিত আইন, বিধির উদ্দেশ্য, মর্ম গভীরভাবে অনুধাবন ও প্রায়োগিক সক্ষমতা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে তারা স্ব -স্ব উদ্যোগে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও বন্ধ করবেন।
বাল্যবিয়ের ক্ষতি বহুমাত্রিক। এর মধ্যে নারীর অধিকার হরণ, প্রজনন স্বাস্থ্যঝুঁকি, দারিদ্র্য অন্যতম। বাল্যবিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান কওে না। বরং বাল্যবিয়ে থেকেই অসংখ্য সমস্যার উৎপত্তি হয়। বাল্যবিয়ের কোনো সুফল রয়েছে মর্মে জানা যায় না। সকল আইন, বিধি, বিধান, নীতিমালা বাল্যবিয়ের বিপক্ষে। দৃশ্যত বা প্রকাশ্যে বাল্যবিয়ের পক্ষে কাউকে কাজ করতে দেখা যায় না। সকল অংশীজনই বাল্যবিয়ের বিপক্ষে। অথচ বাল্যবিয়ে হয়েই চলছে। যথাযথ পথ অনুসরণ করে উচ্চ বাল্যবিয়ের হারকে অবিলম্বে প্রতিহত করা প্রয়োজন।
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে বাংলাদেশে শিক্ষার হার, দারিদ্র্য বিমোচন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, সর্বোপরি বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের ধনাত্মক প্রভাবকে গুরুত্ব দিয়ে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭-এর মর্ম অনুসারে সহজভাবে বাল্যবিয়ের সমস্যা নিরসনের কৌশল গ্রহণ করে বাল্যবিয়ের অভিশাপ মুক্ত বাংলাদেশ গঠন করি।
লেখক : সাবেক সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়।
আজকালের খবর/আরইউ