সরকারের করনীতির প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায়। আন্দোলনের কেন্দ্র রাজধানী নাইরোবিতে গত এক সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ৩৯ জন, আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৩৬১ জন।
কেনিয়া ন্যাশনাল কমিশন অন হিউম্যান রাইটস (কেএনসিএইচআর) হতাহতের নতুন এ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। খবর এনডিটিভির।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) এনডিটিভি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেনিয়ার জাতীয় মানবাধিকার সংস্থা কেএনসিএইচআর দেশটিতে সরকারবিরোধী সাম্প্রতিক বিক্ষোভে ৩৯ জন নিহত হওয়ার তথ্য কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটির প্রকাশ করা নিহতের এই সংখ্যা সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা সংখ্যার দ্বিগুণ।
সরকারের অর্থায়নে চলা এই সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, আমাদের রেকর্ড থেকে পাওয়া তথ্য থেকে ইঙ্গিত মিলছে যে, বিক্ষোভকালে ৩৯ জন নিহত এবং ৩৬১ জন আহত হয়েছে।
বিবৃতিতে বিক্ষোভের সময়কাল ১৮ জুন থেকে ১ জুলাই উল্লেখ করা হয়েছে।
সংস্থাটি আরো বলেছে, এ পর্যন্ত মোট ৩২টি মামলা হয়েছে এবং ৬২৭ জনকে আটক করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার প্রায় সব ধরনের পণ্যের ওপর কর বৃদ্ধিসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাস হয় কেনিয়ার পার্লামেন্টে। প্রস্তাবটি পাসের সঙ্গে সঙ্গেই পার্লামেন্ট চত্বরসহ পুরো নাইরোবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ। আন্দোলনকারীরা পার্লামেন্ট চত্বরের একটি পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেন, বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি শুরু করে পুলিশ।
আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবি প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর পদত্যাগ, যিনি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছেন। সেই নির্বাচনের পর থেকেই কেনিয়ায় দিন দিন রাজনৈতিক বিভক্তি তীব্র হয়ে উঠেছে।
রবিবার (৩০ জুন) কেনিয়ার সরকারি টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন উইলিয়াম রুটো। সেই ভাষণে তিনি বলেছেন, আন্দোলনে এ পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। তবে তাদের মৃত্যুর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়ী নয় বলে দাবি করে মৃত্যুর তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
এদিকে কেএনসিএইচআর তাদের বিবৃতিতে বিক্ষোভকারী, চিকিৎসাকর্মী, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বলপ্রয়োগ এবং চার্চ, হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্সের মতো নিরাপদ স্থানগুলোতে সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার সংস্থাটির অভিমত, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে যে শক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল তা অত্যধিক ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।
সংস্থাটি পার্লামেন্ট ভবন ও অন্যান্য সরকারি ভবনে কিছু বিক্ষোভকারীর ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের মতো সহিংতামূলক কাজের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) কর বৃদ্ধি সম্বলিত বিলটি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট রুটো। তবে তা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা নতুন দফায় কর্মসূচি শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। কেনিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ভরে উঠেছে ‘সব জায়গা দখল করো’, ‘রুটোর বিদায় চাই’, ‘বাজেট দুর্নীতিবাজদের বাতিল করো’ প্রভৃতি হ্যাশট্যাগে।
আজকালের খবর/এসএইচ