সোমবার ১ জুলাই ২০২৪
আপেক্ষিক মৃত্যু কিংবা ক্ষরণ
রায়হান উল্লাহ
প্রকাশ: শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪, ৩:১৪ PM
প্রাণ জন্ম নিয়ে কিছু অমোঘ সত্যের মুখোমুখি হয়। মৃত্যু তার একটি। আরো সত্যের খোঁজে জীবন পার করে প্রাণ। দেখা পেতে চায় স্রষ্টার। দেখা মেলে অনেক কিছুর। নিজেকে মিলিয়ে বলতে পারি— প্রাণ সৃষ্টিরহস্য ধরতে চায়। সম্ভব হয় না। প্রাণকে সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।

সময় পরম্পরায় ধরায় অসংখ্য, অগুনতি প্রাণ এসেছে, আসবে আরো কতটা সময়— জানি না আমরা। আবারও নিজেকে মিলিয়ে বলতে হয়— সবার ইচ্ছা ছিল কিংবা হবে, অমরত্ব পাওয়ার। সত্য বেশি বেশি দেখা যেত অমরত্বে। কিন্তু যিনি সবকিছুর নিয়ন্তা তিনি ভেবেছেন জীবন-প্রাণ একটি খণ্ডচিত্র। হয়তো আরো আরো সময়ের পাথেয়। তাই অমরত্ব সম্ভব না।

সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিতে প্রাণ অমর। জাগতিক দেহান্তরকে আমরা মরণ ভাবতে পারি। কিন্তু মৃত্যুর পর প্রাণ কোথাও না কোথাও থেকে কিংবা চলে যায়। কেউ তো এসে বলে যায়নি। প্রাণ একটি শক্তি। শক্তির রূপান্তর আছে, বিনাশ নেই। রূপান্তর মৃত্যু মুহূর্তে হয়। এরপর অন্যঘর।

প্রাণ ছিল একটি দেহে, স্রষ্টার ইশারা। দেহ গিলে খাবে মাটি। মাটি থেকেই দেহের উৎপত্তি। কোনো এক ইশারা থেমে গেছে, সুন্দর দেহখানি রেখে। তিনি আর নেই। জীবন, হায়রে জীবন!

জন্মমুহূর্ত কারো মনে থাকে না। অর্থাৎ বুঝতে শিখেই পৃথিবী-ভ্রহ্মাণ্ড; গোলক চরাচর। তারপর প্রশ্ন আর প্রশ্ন। আক্ষেপ আর স্রোতধারা। বেভুল চরাচরে পদচ্ছাপ থেকে যায়। কী এক তীব্র বান, ইহদাম ছেড়ে যেতে হবে।

এভাবে প্রাণ এসেছে আসবে। সুরাহা হবে না কিছুর। সবাই থাকবে, আমার পায়ের চিহ্ন রবে না- এমন ভাবনা কিংবা তীব্র হাহাকার সবার থাকবে। এই মৃত্যু, জীবনের যবনিকা।

জীবন একটি চক্র। মৃত্যু এসে চক্রের আপনার অধ্যায় শেষ করে দেয়। ইথারে রয়ে যায় কথামালা। কথামালার মাঝেই আপনি, আপনার সময়। কথামালা পরিপূর্ণ ও রঙিন চাই। থেকে যেতে হবে, মৃত্যু-পরবর্তী সময়ে। অনন্তে বাজতে হবে সুরেলা। এর বেশি কিছু আমাদের হাতে নেই। পরম করুণাময় আমাদের দেননি। বিশ্ব চরাচরের সবকিছু তার আপন গতিতে চলছে; আমি-আপনি ভেতরেই আছি। এর বেশি ভাবনা নেই। এর বেশি কামনা নেই। খুব বেশি কষ্ট পেতেও নেই।

ধরতে শিখুন আত্মার খোরাক। পড়তে শিখুন প্রাণের আকুতি। মিলে যাবে স্রষ্টা। এই কলঙ্কের তীলক বাহার- অদৃষ্ট। ভারী কথামালা সাজিয়ে মৃতুঞ্জয়ী!

তারপরও কথা সাজে- কী-তে কী হয়? বুভুক্ষু হৃদয় দেখে মৃত্যুর মিছিল। মাটির উলটপালট- মাটিকাব্য। মৃত্যুই হয়তো শেষ মাটিকাব্য।

প্রকৃত দুঃখবোধে লাভ নেই। ধরা যাবে না কিছুই। ধরতে হবে বিবেকের পাঠ। আর ধরতে হবে স্রষ্টাকে। ভিন্ন ভিন্ন রূপে তিনি আমাদের মাঝেই বিরাজমান। লক্ষণ প্রকাশ পেলেও আমাদের ক্ষুদ্র জ্ঞানে তা আসে না।

আমরা মেতে উঠি জিঘাংসায়। ভাবি দর্শন আমার পুঁজি। কথামালা থেকে যায় হানাহানির। বিশ্ব সংসার তছনছ হয়। প্রাণ লুণ্ঠন হয়। হরদম মৃত্যু হয়। আজব ভাবনা আমাদের।

আমাদের জাগতিক অসংখ্য পড়শি মৃত্যুর ঘর করে। পালকি করে চলে যায় অজানা সময়ে। আমাদের সময় ফেরে না। ধরতে চাই না আলো। কালোর মুখোমুখি হই আমরা একসময়। আলো নিভে যায়। করার হয়ে উঠে না কিছু।

এভাবেই মৃত্যু ধ্রুব হয়ে আসে। জীবন থুয়ে থাকে পাশে। অনন্ত পড়ে থাকে ওপাশে। তিনি ছিলেন, জোছনার বান ছিল, বৃষ্টির গান ছিল, পাখিদের ঐকতান ছিল।

মৃত্যু-পরবর্তী আত্মারা এসে যেন বলে যায়— ঐকতান গড়। ব্যঞ্জনায় ধরতে হয়, ধরা হয়। ঐকতানের সংসারে মৃত্যুকে স্বাগতম। আসলে মৃত্যুবরণের বিষয়। ইশারার জগৎসংসার। নিরাকার একজনের ইশারা; তিনি পরম।

পরমের প্রতিই বলতে হয়- জীবন এত ছোট কেন? তারাশঙ্কর হয়ে ঠুনকো রাউ-তে। সবাই বরণ করে বিলাপ। আলাপ হয়ে রয় বিবেক। দংশনে মরমর-চরাচর মায়াপথিক। রাউ অনন্তের বাতাস চাই, নিরাকারের ইশারা চাই, অক্ষরের কাব্য গড়ে!

কে যেন কানে কানে বলে ওঠে— হায়রে সময়, যদি ধরতে পারতাম। বেদনার বালিবেলায় আমিও যে ছিলাম। এভাবেই আমাদের গঞ্জনা গাথা হয়। ব্যথারা দলেবলে কৌশলে মৃত্যু হয়। মৃত্যু অমোঘ হালখাতা!

পরজীবনের খাতা খোলা হয়। আরো আরো কিছু হয়। পরম জগৎ, পরম পাওয়া। এ পাওয়ার সময়কাল জাগতিক। বলা চলে, সেলুলয়েড সংসার। কৃতকর্ম জাগতিক অধিকার। পুণ্যের পাঠশেষে পরম আরাধ্য।

আরাধ্য খোদা। যিনি আকুল মায়ায় সৃষ্টি করেছেন। আকুল ছায়ায় রেখেছেন। ফুলের ক্ষরণে মৃত করেছেন। পরম সময়ে যাপন করিয়েছেন। তাতেই যত কথা। হায়রে মানুষের নাইরে জীবন নিয়ে যত ব্যথা। রূঢ় চিৎকার।

মৃত্যু কি এক ফুৎকার নয়। ওড়ে গেল প্রাণপাখি। শুরু হয় শোরগোল; জগতে-মাটিতে। চক্রাকার আহার হই, নিলাকার মৃত্যু হই। খোদার প্রশ্নবান হই। তার পরশেই থাকি- আরাধ্য সময়ে।

তবু কত কানাকানি। সরব মাতোয়ারা। প্রতিসরণের হল্লা। জীবনময় রহস্য লুকিয়ে মৃত্যুর বন্দনা। বজ্রনিনাদ কান্না পেরিয়ে প্রাণের ক্ষরণ। তিনি বলেছেন, আমিই প্রাণদান করেছি, আমিই মৃত্যু দেব, আমার কাছেই প্রত্যাবর্তন হবে।

প্রত্যাবর্তনের কলরব চলছে জন্ম থেকে। মৃত্যু কলরবের অংশ। তারপর অন্যস্বর। প্রত্যাবর্তনের জলঘর। জলজ রোজনামচা। অচীন কুহক সুর, রিনঝিন দোর। মৃতদের মিছিল। হিসেবের সংসার। শেষ বলে কিছু নেই। শেষের শেষেই পরজীবন; নিরাবরণ অচিনপুর। আপেক্ষিক আমরা পরমে ঘর বাঁধি; ক্ষরণের যাতনা।

আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
৩৫ মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এলো জুনে
খোলামেলা পোশাকে ভক্তদের তোপের মুখে মাহিরা
সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে ‘স্থবির’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
শ্রীনগর উপজেলার নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান কিসমতের শপথ গ্রহণ
সাদুল্লাপুরে নদী থেকে অজ্ঞাত নারীর ভাসমান লাশ উদ্ধার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
হলি আর্টিজানে হামলার আট বছর, যা ঘটেছিল সেদিন
কবি আসাদ বিন হাফিজ আর নেই
রংপুরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
দ্বিতীয় রাজনৈতিক সংলাপে বসছে সৌদি-বাংলাদেশ
মেক্সিকোকে বিদায় করে কোয়ার্টারে আর্জেন্টিনাকে পেল ইকুয়েডর
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft