সোমবার ১ জুলাই ২০২৪
সুকান্তের পৃথিবী গড়ার আহ্বান
সাকিব জামাল
প্রকাশ: শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪, ৩:১১ PM
চির তরুণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। বাংলা সাহিত্যের প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। তারুণ্যের শক্তি দিয়ে উন্নত শিরে মানুষের মর্যাদার জন্য মানুষকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান সুকান্তের কবিতায় লক্ষণীয়। মানুষের কল্যাণের জন্য সুকান্ত নিরন্তর নিবেদিত থেকেছেন। তিনি মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন। তার অগ্নিদীপ্ত সৃষ্টি প্রণোদনা দিয়ে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে প্রয়াসী ছিলেন। মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা কাব্যধারার প্রচলিত প্রেক্ষাপটকে আমূল বদলে দিতে পেরেছিলেন। এই আধুনিক যুগে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আরো অধিক গবেষণার দাবী রাখে। সুকান্তের কবিতার বিশ্লেষণে আমি বলতে চাই- এই পৃথিবী যতদিন আছে ততদিনই কবি সুকান্তের কবিতার আবেদন থাকবে।

বৈশ্বিক কবি সুকান্ত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মহৎ সাহিত্যিক হিসেবে প্রায় সব গুণই ধারণ করতেন। কবি সুকান্তের কবিতা বিশ্লেষণে বিষয়টি দিবালোকের মতো উন্মোচিত হয়। যাবতীয় শোষণ-বঞ্চনার বিপক্ষে সুকান্তের ছিল দৃঢ়Ñ অবস্থান। তিনি তার কবিতার নিপুণ কর্মে দূর করতে চেয়েছেন শ্রেণি বৈষম্য। মানবতার জয়ের জন্য তিনি লড়াকু ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। অসুস্থতা অর্থাভাব তাকে কখনো দমিয়ে দেয়নি। মানুষের কল্যাণের জন্য সুকান্ত নিরন্তর নিবেদিত থেকেছেন। তিনি মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন- ‘একটি কথায় ব্যক্ত চেতনা : আকাশে নীল,/দৃষ্টি সেখানে তাইতো পদধ্বনিতে মিল।/সামনে মৃত্যুকবলিত দ্বার,/থাক অরণ্য, থাক না পাহাড়,/ব্যর্থ নোঙর, নদী হব পার, খুঁটি শিথিল।/আমরা এসেছি মিছিলে, গর্জে ওঠে মিছিল।।’ (আমরা এসেছি)

তার কবিতায় অনাচার ও বৈষ্যমের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ পাঠকদের  সচকিত করে তোলে। গণমানুষের প্রতি গভীর মমতায় প্রকাশ ঘটেছে তার কবিতায়।  অসহায়-নিপীড়িত সর্বহারা মানুষের সুখ, দুঃখ তার কবিতার প্রধান বিষয়। অবহেলিত মানুষের অধিকার আদায়ের স্বার্থে ধনী মহাজন অত্যাচারী প্রভুদের বিরুদ্ধে নজরুলের মতো সুকান্তও ছিলেন সক্রিয়- ‘মহাজন ওরা, আমরা ওদের চিনি!/হে খাতক নির্বোধ,/রক্ত দিয়েই সব ঋণ করো শোধ!/শোনো, পৃথিবীর মানুষেরা শোনো,/শোনো স্বদেশের ভাই,/রক্তের বিনিময় হয় হোক/আমরা ওদের চাই।।’ (জনতার মুখে ফোটে বিদ্যুৎবাণী)

সুকান্ত একটি আধুনিক কাব্য ভাষার সৃষ্টি করেছেন। চল্লিশের অন্য কবিদের থেকে তার স্বতন্ত্রতা তিনি গণমানুষের মুক্তি প্রণোদনা সৃষ্টিতে মগ্ন ছিলেন। তার প্রতিবাদী কণ্ঠ সমকাল ও ইতিহাসকে বন্দি করে রেখেছে। দ্রোহের অগ্নিপুরুষ বুকের আগুনে সময়কে তারা আরো শুদ্ধ করে দিয়ে যান। তাই তিনি লেখেন- ‘অবাক পৃথিবী! অবাক করলে তুমি!/জন্মেই দেখি ক্ষুব্ধ স্বদেশভূমি।...বিদ্রোহ আজ বিদ্রোহ চারিদিকে/আমি যাই তারি দিন-পঞ্জিকা লিখে,’... (অনুভব)

সুকান্তের কবিতা সব ধরনের বাধা-বিপত্তিকে জয় করতে শেখায়। যাপিত জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণাকে মোকাবিলা করার সাহস তার কবিতা থেকে পাওয়া যায়। তারুণ্যের শক্তি দিয়ে উন্নত শিরে মানুষের মর্যাদার জন্য মানুষকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান সুকান্তের কবিতায় লক্ষণীয়। সুকান্তের কবিতা সাহসী করে, উদ্দীপ্ত করে- ‘আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়/পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,/এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়-/আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।’ (আঠারো বছর বয়স)

অভিনবত্বের চেয়েও প্রকাশ ভঙ্গির বলিষ্ঠতা এবং প্রতিমা নির্মাণের অভিনবত্বের জন্য পাঠক সমাজে অকুণ্ঠ প্রশংসা পেয়েছে। উচ্চতর মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য সুন্দর, মানবতার, অধিকার ও সমতার পৃথিবীর স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। তার অনেক কবিতায় পৃথিবীকে সাজানোর প্রত্যয় এবং প্রয়াস লক্ষণীয়-
‘এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;/জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে/চলে যেতে হবে আমাদের।/চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,/এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’ (ছাড়পত্র)

বাংলা সাহিত্যে তার এই বৈশ্বিক ভাবনা সকল সংকীর্ণতার উর্ধ্বে। অনেকটা বিশ্বনেতার মত স্বপ্ন কাতুরে। তার কবিতার মত সুন্দর হোক এই পৃথিবী একজন পাঠক হিসেবে এই প্রত্যাশা নিয়ে বেঁচে আছি।

আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
শ্রীনগর উপজেলার নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান কিসমতের শপথ গ্রহণ
সাদুল্লাপুরে নদী থেকে অজ্ঞাত নারীর ভাসমান লাশ উদ্ধার
বর্ণাঢ্য আয়োজনে কোচ কাঞ্চন একাডেমির সপ্তম বর্ষে পদার্পণ
কেবল চাকরির জন্যই উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য নয়: স্পিকার
পূর্বধলায় গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা, যুবক আটক
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কবি আসাদ বিন হাফিজ আর নেই
হলি আর্টিজানে হামলার আট বছর, যা ঘটেছিল সেদিন
বৃষ্টি আজ আরো বাড়তে পারে, মাসজুড়ে থাকার সম্ভাবনা
রংপুরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
দাম কমল ডিজেল-কেরোসিনের
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft