সোমবার ১ জুলাই ২০২৪
ধান্ধা
রেজাউল করিম খোকন
প্রকাশ: শনিবার, ২৯ জুন, ২০২৪, ৩:০২ PM
সকালে মোহাম্মদপুর শেখেরটেকে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তড়িঘড়ি করে বেরোয় ফারজানা। রাস্তায় নেমে কব্জি উল্টে ঘড়ি দেখে। ইস, ১০টা বেজে গেছে। জাপান গার্ডেন সিটির বিপরীতে প্রিন্স বাজারের সামনে হাসান সাহেবকে অপেক্ষা করতে বলেছে সে আরো আধা ঘণ্টা আগে। বাসার সবকিছু গুছিয়ে নিজে ঠিকঠাক হয়ে বেরোতে বেরোতে দেরি হয়ে গেল। ছেলে ইভানের সামনেই এসএসসি পরীক্ষা। কোচিং-এ যাবে দুপুরে। যাবার আগে খেয়ে যাবে। ফ্রিজ থেকে মাছ, তরিতরকারি বের করে বাসার বুয়াকে রান্নার সব আয়োজন বুঝিয়ে দিতে দিতে সময় লেগে গেল। এরপর বাথরুমে ঢুকে ঝটপট গোসলটা সেরে জামা কাপড় পরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে স্রেফ ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়েছে। তেমন কোনো সাজগোজ করেনি। ফারজানা এমনিতেই বেশি সাজগোজ করে না। আর আজ যার সঙ্গে অ্যাপয়নমেন্ট সেই হাসান সাহেবও সিম্পল সাজসজ্জা পছন্দ করেন। গত বেশ কয়েক মাসে ফারজানা লোকটার রুচি ও পছন্দ সম্পর্কে জেনে গেছে ভালো করে।
প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে হাসানের বয়স। কাজ করে একটা করপোরেট অফিসে। মোটামুটি বড় কর্মকর্তা। তবে বেশ সাধারণ, শান্ত, ধীর-স্থির স্বভাবের। নিরীহ, শান্তশিষ্ট, নিপাট ভদ্রলোক বলা যায়। মিষ্টি ভাবির বাসায় তার সঙ্গে প্রথম পরিচয় ফারজানার। হাসানের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের দিনটি তেমন জমেনি। নিজের মধ্যে বারবার গুটিয়ে যাচ্ছিল মানুষটা। ফারজানাকে নিয়ে তেমন কিছু করা হয়ে ওঠেনি সেদিন। সে নিজেও বেশ বিব্রতবোধ করছিল। বিরক্ত লাগছিল। কিছু না করতে পারলে শুধু শুধু এতোগুলো টাকা দিয়ে এখানে আসার কোনো মানে হয় না। ফারজানা নানাভাবে সহযোগিতা করলেও শেষ পর্যন্ত হাসান বার বার নিজেকে প্রকাশে ব্যর্থ হচ্ছিলো। সেদিন কিছু করতে না পারলেও হাসান তার পেমেন্টটা ঠিকঠাক মতো করেছিল। এক টাকাও কম দেয়নি। টাকাটা ফারজানার হাতে দেবার সময় অনেকটা অপরাধীর ভঙ্গিতে সে বলেছিল, আই অ্যাম সরি, আমার আচরণে বিরক্ত হয়েছেন হয়তো, আপনার সঙ্গে আবার দেখা হবে, কারণ আপনাকে খুব ভালো লেগেছে আমার। হাসানের তেমন কথায় ফারজানা মনে মনে হেসেছিল সেদিন। পুরুষ জাতটাকে চেনা হয়ে গেছে তার বেশ ভালো করেই। এ পর্যন্ত অনেক পুরুষকেই তো দেখেছে সে। মেয়েদের মুগ্ধ করতে, প্রলুব্ধ করতে, প্রেমের ফাঁদে ফেলতে কতো কী করে তারা। হাসান সেদিন তার মোবাইল নম্বরটা চেয়েছিল। কিন্তু ফারজানা কী মনে করে দেয়নি। মোবাইল হারিয়ে গেছেÑ মিথ্যে বলেছিল। বিশদিন পর মিষ্টি ভাবী ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন তার বাসায়। ওখানে গিয়ে হাসানকে দেখে অবাক হয়েছিল ফারজানা। সেদিন বারবার চেষ্টার পর তেমন কিছু করতে না পেরেও পর আবার তার সঙ্গে সময় কাটানোর সাধ হয়েছে। লোকটার অদ্ভুত সাধ। কিছু করতে পারে না, তারপরও আবার এসেছে।
রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বিছানায় বসতে বসতে ফারজানা অনেকটা ঠাট্টার সুরে হাসানকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল, কী ভাই, ভালো আছেন, শরীর-স্বাস্থ্য, যন্ত্রপাতি সব ঠিক আছে তো?
তার কথায় লজ্জা পেয়ে যায় হাসান। সহজ সরল ভঙ্গিতে বলে, জ্বি আমি ভালো আছি, আপনি ভালো তো?
আমি ভালো না থাকলে এখানে আসতে পারতাম?
সেদিন হাসান তার নিজের সম্পর্কে অনেক কথাই বলেছিল। তার কথাবার্তায় টের পেয়েছিল ফারজানা। লোকটা খুব সহজ-সরল। হাসানের ছেলে-মেয়েরা স্কুল-কলেজে পড়ে। বউ কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়ায়। তবে ডায়াবেটিসের কারণে আরো আগে থেকেই এক ধরনের শারীরিক নিস্পৃহ ভাব সৃষ্টি হয়েছে। হাসানের কোনো চাহিদাই মেটাতে পারে না সে। অনেক জোরাজুরি করে রাজি করালেও নিজে কোনোভাবেই সাড়া দিতে পারে না। এভাবে দিনের পর দিন কাটাতে কাটাতে এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়েছে। নিজের চাহিদা মেটাতে হাসান মাঝে মধ্যে মিষ্টি ভাবীর বাসায় আসে। বিভিন্ন সময়ে হাসানের চাহিদামতো বিভিন্ন জনকে এনে রাখেন মিষ্টি ভাবী। লোকটা অন্য অনেকের মতো অযথা হইচই কিংবা সিনক্রিয়েট করে না এখানে এলে। পেমেন্ট নিয়েও কোনো ঝামেলা করে না। যেমন চাওয়া হয় তেমনই পেমেন্ট করে দেয় কাজ শেষে। ফারজানা মিষ্টি ভাবীর কাছে তার প্রশংসা শুনেছে কয়েকবার। ফারজানার নিজের অ্যাপার্টমেন্টেও মিষ্টি ভাবীর বাসার মতো একই কাজ চলে। বিভিন্ন ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী সুন্দরী মেয়েদের এনে রাখে ঘরে। কাজ শেষে যে যার মতো চলে যায়। মাঝে মধ্যে গুলশানের গেস্ট হাউজসহ হোটেল সোনারগাঁও, শেরাটনের মতো হোটেলেও ক্লায়েন্টদের রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী মেয়েদের নিয়ে যায়। এ কাজে বেশ জমিয়ে ফেলেছে ফারজানা। বেশ ভালো ইনকাম হচ্ছে। তার কয়েকটা ভালো পার্টি আছে। গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির মালিক, বড় বড় কাজের কন্ট্রাক্টর আছে কয়েকজন। গার্মেন্টসের বিদেশি বায়ার, সরকারি আমলা, ইঞ্জিনিয়ার, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের মনোরঞ্জনে হাইফাই সুন্দরী, স্মার্ট, টগবগে যুবতী মেয়েদের ব্যবস্থা করে দেয় ফারজানা। দুই হাজার থেকে দশ-বিশ হাজার টাকা রেটের বহু মেয়ে আছে এ লাইনে। কখনও কখনও কারো রেট ত্রিশ পঁয়ত্রিশ হাজারে গিয়ে ঠেকে। কলেজ ভার্সিটিতে পড়ুয়া মেয়ে থেকে শুরু করে এয়ারহোস্টেস, হাউজওয়াইফ, বিভিন্ন অফিসে চাকরিজীবী নারীদের নিয়ে একটা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে ফারজানা। চাহিদামতো মোবাইলে কল দিলে তারা জায়গামতো হাজির হয়ে যায়।
মিষ্টি ভাবীর সাথে আগের পরিচয়ের সূত্র ধরে মাঝেমধ্যে তার বাসায় আসে ফারজানা। এমনিতে নিজে একাজ খুব একটা করে না। নিজের বাসায় কোনো সময়ে খদ্দেরদের অফারে সাড়া দেয় না ফারজানা। বাসায় ছেলে ইভান আছে। হাসবেন্ড নাজমুলও ঘরে থাকে বেশির ভাগ সময়। আশেপাশের অ্যাপার্টমেন্টের লোকজন কেউ জানে না ফারজানার ব্যবসার আসল খবর। সবাই জানে ফারজানার বুটিকশপের ব্যবসা এবং হাসবেন্ড নাজমুলের শাকসবজি এক্সপোর্টের কারবার আছে। এখন নাজমুল কিছুই করে না। সারাক্ষণ বাসায় থাকে। বাইরে তেমন যায় না। ওয়াপদার কন্ট্রাক্টর ছিল। মোটামুটি ভালো কাজ পেত। কিন্তু হঠাৎ কী কারণে বেশ বড় অঙ্কের কয়েকটা বিল আটকে যাওয়ার পর থেকে কয়েক বছর ধরে বেকার বলা যায়। মাঝখানে শেয়ার বিজনেসে জড়িয়েছিল। সেখানেও গচ্চা দিয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। ব্যবসায় একের পর এক মার খেয়ে বলতে গেলে প্রায় পঙ্গু হয়ে ঘরে পড়ে আছে নাজমুল। এ অবস্থায় সংসারের হাল ধরতে ফারজানা নিজে তৎপর হয়। অনেক খেটেখুটে মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডে একটা বুটিক শপ দেয়। শুরুতে ভালো জমলেও এক পর্যায়ে যথেষ্ট পুঁজির অভাবে বুটিক শপের ব্যবসা লাটে ওঠে। বুটিক শপের ব্যবসা করতে গিয়ে মিষ্টি ভাবীর সাথে পরিচয় হয়েছিল। তার মাধ্যমেই নতুন আরেক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। নতুন এ ব্যবসায় অনেক ঝুঁকি, বিপদ, সামাজিক মর্যাদা হারানোরসমূহ শঙ্কা থাকলেও গত কয়েক বছরে বেশ গুছিয়ে নিয়েছে সে এ লাইনে। বড় কোনো বিপদে পড়েনি এখনও। নাজমুল ওর দ্বিতীয় স্বামী। এর আগের স্বামীর সঙ্গে সাত বছর ঘর করার পর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ইভান আগের সংসারের হলেও স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর ফারজানা ছেলেকে নিজের সঙ্গে নিয়ে এসেছে।
মিষ্টি ভাবীর বাসায় হাসানের সঙ্গে দ্বিতীয়বার দেখা হওয়াটা ফারজানার জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু না হলেও হাসান তার শুকনো মরুময় বিতৃষ্ণ, অতৃপ্ত জীবনে সবুজ মরুদ্যানের অপূর্ব স্বাদ পেয়েছিল সেদিন। দীর্ঘসময় ধরে তার দেহমনে জেগে ওঠা তৃষ্ণা সেদিন মিটিয়ে দিয়েছিল ৪০ পূর্ণ করা এই নারী। হাসানের অনুরোধ সেদিন অগ্রাহ্য করেনি ফারজানা। নিজের মোবাইল নম্বর দিয়েছিল তাকে। সেই থেকে ফারজানার অ্যাপার্টমেন্টে মাঝে মধ্যে আসে লোকটা। ফারজানাই আগে থেকে বিভিন্ন সময়ে মেয়েদের এনে রেখে দেয় বাসায়। কিন্তু হাসান বারবার ফারজানাকে চায়। দু’জন ড্রইংরুমে বসে অনেকক্ষণ গল্প করে। সংসারের নানা কথা, আগের স্বামীর কথা, ছেলের কথা, স্বামীর ব্যবসা বাণিজ্যে মার খাওয়ার কথা সবই অকপটে খুলে বলেছে ফারজানা। কয়েকদিনের পরিচয়ে হাসানকে খুব কাছের একজন মানুষ ভাবতে শুরু করেছে সে। লোকটার মনে কোনো প্যাঁচ নেই। সেও তার ঘরের সব কথা, ছেলে-মেয়ে বউয়ের কথা তার কাছে প্রায়ই বলে। হাসানকে আজকাল বন্ধুর মতো মনে হয় তার। ফারজানাও তার ব্যবসা বাণিজ্য, ঢাকা শহরে স্ট্যাটাস, ঠাটবাট বজায় রাখা, জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার সব কথা অকপটে খুলে বলেছে হাসানের কাছে। লোকটা তাকে ঘৃণা বা ভিন্ন চোখে না দেখে এক ধরনের সহানুভূতি নিয়ে কথা বলে। নানা বুদ্ধি-পরামর্শ দেয়। ব্যাপারটা ফারজানার বেশ লাগে, মনে অন্যরকম অনুভূতি ছড়ায়। হাসানকে খুব ভালো একজন বন্ধু মনে হয়।
গত কয়েকদিন ধরে হাসান ফারজানাকে অনেকবার অনুরোধ করেছে। তার জন্য কিছু সময় দিতে। তার নিজের বাসায় এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়Ñসাফ জানিয়ে দিয়েছে সে। হাসানের চাপাচাপিতে শেষ পর্যন্ত কাছেই তাজমহল রোডে দিপার বাসায় যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফারজানা। ওখানেই যাবে তারা দু’জন। দিপাকে বলা আছে আগে থেকে। এ জন্য অবশ্য দিপাকে কিছু টাকা দিতে হবে। আজকাল ঢাকা শহরের অনেক ফ্ল্যাট বাসায় তেমন ব্যবসা চলছে। যাদের নিজের বাড়িতে বা বাসায় সুযোগ নেই, তারা পাঁচশ-এক হাজার টাকার বিনিময়ে বান্ধবী-প্রেমিকা অথবা পছন্দের কাউকে সঙ্গে নিয়ে একান্তে সময় কাটাতে আসছে এখানে।
বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নামতেই ফারজানা একটা খালি রিকশা পেয়ে যায়। রিকশা না পেলে হেঁটেই রওনা দিতে হতো। এমনিতেই বেশ কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। হাসান সাহেব দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রিন্স বাজারের সামনে দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছেন নিশ্চয়ই। রিকশায় চড়ে বসতেই মোবাইল ফোনটা বেজে ওঠে। হাসান ফোন করেছে।
‘প্লিজ ভাই, আর একটু অপেক্ষা করেন, আমি রিকশায় আসছি, প্রিন্স বাজারের সামনে থেকে আপনাকে তুলে নেবো’Ñ কথাগুলো বলে ফারজানা মোবাইলটা ভ্যানিটি ব্যাগে রেখে দেয়। রিকশাঅলা জানতে চায়, আপা কই যাইবেন?
‘তাজমহল রোড চলো।’
প্রিন্স বাজারের সামনে হাসান দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে ফারজানার জন্য। হাসান রিকশায় ফারজানাকে দেখতে পায়। রিকশাটা রাস্তার পাশে দাঁড়াতেই কিছুটা ইতস্তত করে হাসান। একসঙ্গে তার পাশে বসে একই রিকশায় যেতে তার মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা কাজ করে। চেনা-জানা কেউ যদি দেখে ফেলেÑ তার মনে ভয়। এই এলাকায় তার পরিচিত বেশ কয়েকজন থাকে। কয়েক মুহূর্ত ভাবে সে। রিকশায় বসা ফারজানা তাড়া দেয়, কী ব্যাপার, কী ভাবছেন, কই উঠুন। তার কথায় কী যেন হয়ে যায়, হাসান সব দ্বিধা ঝেড়ে ফারজানার পাশে রিকশায় চেপে বসে।
দিপার বাসায় নির্ধারিত রুমে ঢুকে ফারজানা দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর অনেকটা ক্লান্ত ভঙ্গিতে হাসানের শরীর ঘেষে বিছানায় বসে।
আই অ্যাম সরি, আপনাকে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখেছি। আমার, দেরি হয়ে গেল। বাসার সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে বোরোতে বোরোতে একটু দেরি হলো। বুঝেন তো সংসারটাও দেখতে হয় আমার। আজ কী রান্না হবে, সবকিছু গুছিয়ে জোগাড়যন্ত্রর করে বাসার কাজের বুয়াকে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। ছেলেটা দুপুরে খেয়ে কোচিং এ যাবে। হাসবেন্ড এখনও ঘুমোচ্ছে। সেও খাবে।
এখান থেকে আবার অন্য কোথাও যাবেন বুঝি? হাসান প্রশ্ন করে।
এখান থেকে ধানমন্ডি যাবো, বুটিক শপের বিজনেসটা আবার শুরু করার কথা ভাবছি, এক আপা আমার সাথে পার্টনার হবেন, এ বিষয়ে আলাপ করতে যাবো।
আপনি এতো কষ্ট করেন সংসারের জন্য, অথচ আপনাকে দেখে বোঝা যায় না...
কি বোঝা যায় আমাকে দেখে? পাল্টা প্রশ্ন করে ফারজানা।
হাসান অপ্রস্তুত হয় তার কথায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনেকটা হতাশ কণ্ঠে বলে, আসলে এই ঢাকা শহরে আমাদের মধ্যে কতো মানুষ কী ভীষণ ক্রাইসিসের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি তা বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। অথচ আমরা সবাই সুখী মানুষের মুখোশ পরে একে অন্যের মুখোমুখি হচ্ছি, অফিস করছি, চলছি ফিরছি খাচ্ছি দাচ্ছি, ঘর সংসার করছি।
আরে আপনি তো ফিলসফার হয়ে গেলেন দেখছি, এখন ফিলসফার হলে কী চলবে, এখানে কী ফিলসফি করতে এসেছেন, আমার কষ্টে আপনার মনে সিমপ্যাথি হচ্ছে জানি, কিন্ত আমার কষ্ট কি দূর করতে পারবেন আপনি?
ফারজানার প্রশ্নে কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায় হাসান। কী বলবে তার কথার জবাবে ভেবে পায় না। ফারজানা হাসতে থাকে হাসানের বিব্রত অবস্থা দেখে। হাসি থামিয়ে কিছুটা গম্ভীর হয় সে।
সংসারটাকে সচল রাখতে স্ট্যাটাস, ঠাট-বাট ধরে রাখতে এই শহরে সবাই আমরা নানা ধান্ধায় ব্যস্ত, আমার কথাই ধরুন, আমি একজন হাউজওয়াইফ হয়েও আজ কী করছি, আমার তো শুধুমাত্র ঘর সংসার সামলানোর কথা, এক সময়ে নিজেকে একজন ভালো হাউজওয়াইফ মানে সুগৃহিণী হিসেবে ভাবতে চাইতাম, সব জায়গায় নিজের এই পরিচয়টা দিতে গিয়ে মনটা অন্যরকম এক অনুভূতিকে ভরে উঠতো। অথচ কি মজার ব্যাপার দেখেন, এখন আমার হাউজওয়াইফ পরিচয়টার অন্যরকম কদর বিভিন্ন পুরুষের কাছে। যেমন, আপনি আমার কাছে এসেছেন, আমাকে পছন্দ করছেন আমার হাউজওয়াইফ পরিচয়ের কারণে। বাজারে এখন হাউজওয়াইফদের আলাদা চাহিদা। অনেক পুরুষ চায় তাদের। আমি সেই হাউজওয়াইফদের একজন। যে নিজের এই পরিচয়টাকে উপার্জনের বড় উপায় হিসেবে কাছে লাগাচ্ছে।  
একটানা কথাগুলো বলতে বলতে হঠাৎ গলাটা ধরে আসে ফারজানার। একসময় ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলে। তার কান্না দেখে মোটেও অবাক হয় না হাসান। সে লক্ষ্য করে ফারজানার সুখী চেহারার মুখোশটা যেন খুলে পড়েছে। এবার তার আসল চেহারাটা দেখা যাচ্ছে। এক অসহায় গৃহবধূ তার সামনে কাঁদছে অঝোরে। হাসান তাকে কিছু বলে না। ফারজানার কান্নায় কোনো কৃত্রিমতা নেই খেয়াল করে সে। কেঁদে কেঁদে যদি সে তার বুকের গভীরে জমিয়ে রাখা অনেক দুঃখের হতাশার গ্লানির বোঝা হালকা করতে পারে, সেটাই তার জন্য হবে অনেকটা স্বস্তির।

আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
৩৫ মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এলো জুনে
খোলামেলা পোশাকে ভক্তদের তোপের মুখে মাহিরা
সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে ‘স্থবির’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
শ্রীনগর উপজেলার নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান কিসমতের শপথ গ্রহণ
সাদুল্লাপুরে নদী থেকে অজ্ঞাত নারীর ভাসমান লাশ উদ্ধার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কবি আসাদ বিন হাফিজ আর নেই
হলি আর্টিজানে হামলার আট বছর, যা ঘটেছিল সেদিন
রংপুরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
দ্বিতীয় রাজনৈতিক সংলাপে বসছে সৌদি-বাংলাদেশ
মেক্সিকোকে বিদায় করে কোয়ার্টারে আর্জেন্টিনাকে পেল ইকুয়েডর
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft