প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ৭:৫৯ PM আপডেট: ২৫.০৪.২০২৪ ৮:০৩ PM

আগামীকাল শুক্রবার থেকে ৩৫ বছর আগে ১৯৮৯ সালের এই দিনে সাটুরিয়ার উপর আঘাত হানে বাংলাদেশের অন্যতম ভয়াবহ টর্নেডো। মাত্র এক মিনিটের কম সময়ে এই টর্নেডোর আঘাতে সাটুরিয়া বাজারসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম বিলীন হয়ে যায়। চারদিকে আহত মানুষের আত্মচিৎকার ভেসে আসতে থাকে। অচল হয়ে যায় মানুষের জীবনযাপন। প্রায় ১৩শত মানুষ নিহতসহ আহত হয় প্রায় ১২ হাজার মানুষ। গৃহহীন হয়ে পড়ে লক্ষাধিক মানুষ। এখনো এই দিনটির কথা মনে পড়লে অনেকে আঁতকে উঠেন। অনেকেই স্বজন হারানোর ব্যথায় কান্নায় ভেঙে পড়েন।
প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনটি ছিলো বুধবার। তখন রমজান মাস চলছিলো। ওইদিন সকাল থেকে প্রচণ্ড গরম অনূভুত হচ্ছিল। সকাল থেকে বাতাসের কোনো বেগ ছিল না। বিকেল ৫টার দিকে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। রমজাম মাস চলায় অনেকেই ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ইফতারের কিছুক্ষণ আগে প্রচণ্ড বেগে আঘাত হানে এই টর্নেডো। কিছু বুঝে উঠার আগেই সাটুরিয়া বাজারসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সেই রাতেই শুরু হয় উদ্ধারকাজ। একে একে উদ্ধার হতে থাকে লাশ। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশের সারি দেখে হতবাক হয়ে যায় উদ্ধারকারীরা।
সাটুরিয়া বাজারের ব্যবসায়ী মো. আমির খসরু জানান, আমি বৃষ্টি দেখে একটি ঘরে আশ্রয় নেই। টর্নেডোতে সেই ঘরের সার্টার এসে আমার ডান হাতে আঘাত করে। এতে আমার ডান হাত উপরে থেকে কাটা পড়ে।
আরেক ব্যবসায়ী মো. নাদিম বলেন, আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। এ টর্নেডোতে আমাদের বাড়ির চাল উড়ে চলে যায়। এ সময় আমার পিঠে কাঠের টুকরো ঢুকে পড়ে। পরে অপারেশন করে তা বের করা হয়। এখনো আকাশে কালো মেঘ দেখলে আঁতকে উঠি।
সাটুরিয়া সৈয়দ কালু শাহ্ কলেজের শিক্ষক সুদেব বসাক বলেন, আমি তখন ১৬ বছরের কিশোর। টর্নেডোর সময় আমার পেটে কাঠ ঢুকে যায়। আমি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২ বছর চিকিৎসাধীন ছিলাম। আমাকে পুরো সুস্থ হতে ১২ বছর চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। তিনি এই দিনটিকে সরকারিভাবে পালন করার জন্য দাবি জানান।
তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হোসেন মোহাম্মদ এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা টর্নেডো বিধ্বস্ত সাটুরিয়া পরিদর্শন করেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে স্থান করে নেয় এই টর্নেডো। প্রতিবছর মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার মাধ্যমে এই দিবসটি পালন করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালের এই ভয়াবহ টর্নেডোটি আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) ভয়াবহতম টর্নেডো হিসেবে নথিভুক্ত করেছে।
আজকালের খবর/ওআর