দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক কমছেই। খোদ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সবশেষ প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী—পাঁচ মাসের ব্যবধানে ৩৫ লাখ মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক কমেছে। তবে একই সময়ে তুলনামূলক গ্রাহক বেড়েছে আইএসপি ও পিএসটিএন ইন্টারনেটের।
গ্রাহকরা বলছেন, প্যাকেজ সমন্বয়ের নামে মোবাইল অপারেটরগুলো ইন্টারনেটের দাম বাড়ানোই তারা ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন। বাসায় ওয়াইফাই ব্যবহার করছেন। বাইরে অতি প্রয়োজন ছাড়া মোবাইলের ডাটা চালু করছেন না।
বিটিআরসির তথ্যানুযায়ী—২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক ছিল ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার। সবশেষ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের হিসাব প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
জানুয়ারিতে দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক কমে ১১ কোটি ৬৩ লাখে নেমেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের তথ্য এখনো প্রকাশ করেনি বিটিআরসি। তবে সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক ফেব্রুয়ারিতে আরও কমেছে।
বিটিআরসির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রতি মাসে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী—২০২৩ সালের আগস্টে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার। এরপর সেপ্টেম্বর থেকে গ্রাহক কমতে শুরু করে। সেপ্টেম্বরে ২০ হাজার গ্রাহক কমে ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজারে নেমে যায়। অক্টোবরে এক লাফে ৩ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহক কমে দাঁড়ায় ১১ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজারে। নভেম্বর প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক কমে যায়। ওই মাসে গ্রাহক ছিল ১১ কোটি ৮৯ লাখ ৬০ হাজার। এরপর ডিসেম্বর তা কমে ১১ লাখ ৮৪ লাখ ৯০ হাজারে নেমে যায়। সবশেষ জানুয়ারি মাসে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা কমে ১১ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হাজারে নামে।
এদিকে, মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক কমলেও আইএসপি ও পিএসটিএন ইন্টারনেট গ্রাহক উল্টো বেড়েছে। সেপ্টেম্বর আইএসপি ও পিএসটিএন গ্রাহক ছিল এক কোটি ২৪ লাখ ৯০ হাজার। অক্টোবর ও নভেম্বরে এ ইন্টারনেটের গ্রাহকের সংখ্যায় হেরফের হয়নি। ডিসেম্বরে আইএসপি ও পিএসটিএন ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার। সবশেষ জানুয়ারি মাসেও একই গ্রাহক সংখ্যা অটুট রয়েছে।
মোবাইল অপারেটরস কমিউনিটি বাংলাদেশ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়ে ইন্টারনেটের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন গ্রাহকরা। সেখানে সাজ্জাদুল ইসলাম নামে একজন লেখেন, ইন্টারনেটের প্যাকেজগুলো এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে, যাতে ন্যূনতম ব্যবহারের জন্য সাতদিনের প্যাকেজ কিনতেও ২০০ টাকা খরচ হচ্ছে। আবার অনেক সিমে ঠিকমতো নেটওয়ার্কও পাওয়া যায় না। এজন্য মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছি।
মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদুল আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নতুন সিদ্ধান্তে ছোট প্যাকেজ কেনা গ্রাহকরা ডাটা কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। আগে যারা তিনদিনের প্যাকেজ কিনতেন, তারা এখন দাম বেশি বলে কিনছেন না। এ কারণে ইন্টারনেট গ্রাহকও কমছে।
গ্রাহক কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির মহাপরিচালক (এসএস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খলিলুর রহমান বলেন, বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি গণশুনানির আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে গ্রাহকরা কী বলেন, সেটা আমরা শুনবো এবং তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজকালের খবর/বিএস