প্রকাশ: শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩, ৪:৪৪ PM আপডেট: ২৭.০৫.২০২৩ ৬:২০ PM
মোটর গাড়ি কিংবা হেলিকপ্টারে নয়, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে এবার পিতার ইচ্ছা পুরণ করতে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া গরু ও মহিষের ১০টি গাড়িতে করে বরযাত্রী নিয়ে বর বেশে কনের বাড়িতে বিয়ে করতে গেলেন নিরব নামে এক যুবক। গতকাল শুক্রবার বিকালে এমনই একটি ব্যতিক্রম বিয়ের আয়োজন সম্পূর্ণ হয়।
স্থানীয়রা জানায়, জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার খামার নারায়নপুর গ্রামের কুদ্দুস আলীর ছেলে নিরবের (সাব্বির) সাথে বিয়ে ঠিক হয় পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামে মেয়ে ইসরাত জাহান এশা আকতারের। শুক্রবার ছিল তাদের বিয়ের দিন। নিরবের বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে বরবেশে গরুর গাড়িতে করে বরযাত্রী নিয়ে কনের বাড়িতে বিয়ে করতে যাবে। বউমাও আসবে গরুর গাড়িতেই। বাবার সেই ইচ্ছা পুরণ করতে গরু ও মহিষের ১০টি গাড়িতে করে বরযাত্রী নিয়ে বরবেশে কনের বাড়িতে বিয়ে করতে যান নিরব। গ্রাম বাংলার হরিয়ে যাওয়া টাপুর যুক্ত গরু-মহিষের গাড়ি দেখতে শত শত নারী পুরুষ ভিড় জমান বর ও কনের বাড়িতে। রাস্তায় অসংখ্য মানুষ দায়িয়ে গরু-মহিষের গাড়িতে বরযাত্রার দৃশ্য অবলোকন করেন। ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন অনেকেই। এমন আয়োজনে খুশি বর কনের পরিবারসহ এলাকাবাসি। গ্রাম বাংলার এ পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে আগ্রহও প্রকাশ করেন অনেকে।
বরের পিতা কুদ্দুস বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল ছেলের বিয়েতে বরযাত্রী যাবে গরুর গাড়িতে। এ সময় গরুর গাড়ি পাওয় দুষ্কর। তাই মহিষের ৯টি এবং গরুর একটি গাড়ির আয়োজন করি ছেলের বিয়েতে। ছেলেও মেনে নিয়ে গরুর গাড়িতে করেই বিয়ে করতে যায়।
কনের চাচা জয়নাল বলেন, এটা গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া একটি ঐতিহ্য। এ রকম আয়োজনে অমরা খুশি।
নারায়পুর গ্রামের আলম নামে এক ব্যক্তি জানান, তার বাবার কাছে শুনেছেন তার দাদার বিয়েতে বরযাত্রী ও বর গরুর গাড়িতে করে যায়। এরপর আর গুরুর গাড়িতে কোনো বর যাত্রার অনুষ্ঠান এলাকায় হয়নি। দেখে ভাল লেগেছে।
মহিষের গাড়ির পেছনে পা ঝুলিয়ে বসা এক বৃদ্ধ জানান, ৪০ বছর আগে এভাবেই এক প্রতিবেশির বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন পর এমন আয়োজনে তিনিও খুশি।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী পীরগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি জয়নাল আবেদিন বাবুল জানান, আবহমান বাংলার গ্রামিন ঐতিহ্যগুলো ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে গরুর গাড়িতে বরযাত্রাসহ প্রায় হারিয়ে যাওয়া লোকজ সংস্কৃতির কিছু কিছু আয়োজন লক্ষ্য করা যাচেছ। এসব গ্রামিন লোকজ ঐতিহ্য ধারণ ও লালন করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
আজকালের খবর/ওআর