শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
শিশুর জন্য সাজানো বাগান কতটুকু গড়ছি
সোহেলী চৌধুরী
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০২৩, ৭:১১ PM আপডেট: ২৫.০৫.২০২৩ ৯:২৩ PM
বাংলা ব্যান্ড রেনেসার একটি গান তুমুল জনপ্রিয়- ‘আজ যে শিশু/পৃথিবীর আলোয় এসেছে/আমরা তার তরে একটি সাজানো বাগান চাই।’ গানের সূত্র ধরে প্রশ্ন আসে, আমরা শিশুদের তরে কেমন বাগান গড়ছি? বিশ্বসহ বাংলাদেশে শিশুর জন্য সাজানো বাগান পুরোপরি গড়তে পারিনি আমরা। এ দায় আপনার-আমার-সবার। 

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নয়নশীল দেশ। এখানে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বসবাস। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ শিশু। নদীবিধৌত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশে দুর্যোগ, বিশেষত ঝড়, বন্যা ও নদীভাঙনের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। তাই জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগে এসব শিশুকে খেসারত দিতে হয়। আর এ খেসারত তাদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে প্রবেশে বাধ্য করে। 

করোনা সংকটের সময় অনেক পরিবারই টিকে থাকার কৌশল হিসেবে শিশুশ্রমকে আয়ের অন্যতম অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছে। দারিদ্র্য বৃদ্ধি, স্কুল বন্ধ ও সামাজিক সেবাপ্রাপ্তি কমতে থাকায় অধিক সংখ্যায় শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এ চিত্র উদ্বেগের। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার সার্ভে-২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। তার মধ্যে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু নিয়োজিত রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। আর দুই লাখ ৬০ হাজার শিশু এমন কাজে নিয়োজিত যা তাদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

অন্যদিকে গত জানুয়ারিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান সংসদে জানিয়েছেন, দেশে শ্রমে নিয়োজিত শিশুর মোট সংখ্যা এক দশমিক সাত মিলিয়ন। এরমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা এক দশমিক দুই মিলিয়ন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৩ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী এর আগে ২০০৩ সালের সমীক্ষায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ছিল তিন দশমিক চার মিলিয়ন। এমন ক্ষণে শিশুর তরে বর্তমান বা আগামীর পৃথিবী সাজানো বাগান নয়।

করোনাভাইরাস মহামারি শিশু শ্রমিকের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এডিবি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ দশমিক ৫০ শতাংশ। যা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) ২০২০ সালের জরিপ অনুযায়ী ৪২ শতাংশ।

ফলে এই দরিদ্র পরিবারের শিশুদেরও অনেকে কাজে যোগ দিয়েছে আর্থিক সচ্ছলতা আনতে। এ ছাড়া মহামারির সময় যে শিশুরা স্কুল বন্ধ থাকায় কাজে যোগ দিয়েছিল তাদেরও একটা বড় অংশ আর স্কুলে ফেরেনি।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, লাখ লাখ শিশুকে শ্রমের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল করোনার সময়ে, যা গত ২০ বছরের অগ্রগতির পর প্রথম শিশুশ্রম বাড়িয়ে দিতে পারে।

এর মাঝেই দেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধের সময়সীমা বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ ২০২১ সালের মধ্যে দেশ ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম মুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ হলেও তা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে কয়েক দফা সময় পেছানো হয়েছে। সম্প্রতি নতুন করে ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু নতুন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধ হবে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ থাকছেই। সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, এতে যেন কারো কোনো দায় নেই। আমরা এখনো শিশুশ্রম কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধ করতে পারছি না। এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক। দরিদ্রতা, অশিক্ষা, অসচেতনতা, আইন প্রয়োগের দুর্বলতা শিশুদের শ্রমের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আবার সস্তা শ্রমের জন্য কতিপয় অসাধু ব্যক্তি নানা রকম প্রলোভনে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে টেনে আনে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে সব রকম শিশুশ্রম বন্ধ করার তাগিদ আছে। অথচ চারপাশে তাকালেই দেখা যায়, কত শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। শিশুশ্রম ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম শিশু অধিকারের লঙ্ঘন। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষায় (সিএলএস) দেখা যায়, ২০০৩ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ৭৬ লাখ থেকে কমে ৩৫ লাখে নেমে আসে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৪ বছরের নিচে শ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ছিল ৩২ লাখ, যা ২০১৩ সালে ১৭ লাখ ৭০ হাজারে নেমে আসে। ২০১৩ সালের সার্ভে অনুযায়ী অনানুষ্ঠানিক খাতে ৯৫ শতাংশ শিশুশ্রমিক নিযুক্ত। ২০১৮ সালের মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস) অনুযায়ী পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ছয় দশমিক আট শতাংশ শিশু শ্রমে নিয়োজিত।

সমীক্ষায় দেখা যায়, শ্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে শিশুদের স্কুলে উপস্থিতি কমে যায়। শিশুশ্রমে নিযুক্ত ৬৩ শতাংশ শিশু স্কুলে যায় না। এদের মধ্যে আট দশমিক চার শতাংশ কখনো স্কুলে যায়নি। ২০১৩ সালে সার্ভে মতে, ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। ২০১৩ সালে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে ১০ জনের মধ্যে নয় জন ছেলে ছিল এবং ২০১৮ সালে ১০ জনের মধ্যে ছয় জন ছেলে ছিল। ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম হিসেবে নির্ধারণ করা হয় ধূলিকণা, ধোঁয়া, শব্দ বা কম্পন এবং বিপজ্জনক সরঞ্জামের ব্যবহারের মধ্যে কাজ করাকে। এ ছাড়া আগুনের শিখা, গ্যাস এবং প্রচণ্ড তাপ বা ঠাণ্ডার মধ্যে কাজ করা। 

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফের ‘চাইল্ড লেবার : গ্লোবাল এস্টিমেটস ২০২০, ট্রেন্ডস অ্যান্ড দ্য রোড ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে বিশ্বজুড়ে শিশু শ্রমিকের সংখ্য ১৬ কোটিতে পৌঁছেছে।’ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘শুধু গত চার বছরে প্রায় ৮৪ লাখ শিশুকে শিশুশ্রমের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯-এর কারণে ২০২২ সালের মধ্যে আরো ৯০ লাখ শিশু একই ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে।’ আইএলওর পরিসংখ্যান অনুসারে ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা নয় কোটি চল্লিশ লাখে নেমে এসেছিল। গত চার বছরে উদ্বেগজনকভাবে এ চিত্র পাল্টে গেছে। শিশু শ্রমিকের আনুমানিক এই সংখ্যা নিঃসন্দেহে একটি সতর্কবার্তা।

আইএলওর তথ্যমতে, শুধু ঢাকাতেই দেড় লাখেরও বেশি শিশু বিপর্যয়কর কাজের সঙ্গে জড়িত। বাস্তবে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। 

২০১০ সালে শিশুশ্রম বন্ধে একটি নীতিমালা করা হয়। ওই নীতিমালার আলোকে ২০১২ সালে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সেই কর্মপরিকল্পনাতে ২০১৬ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে লক্ষ্য পূরণ না হলে তা ‘রিভাইজ’ করা হয় ২০২১ সালকে লক্ষ্য ধরে। কিন্তু এবারো আমাদের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। জানা যায়, শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান ১৪ বছরের নিচে শিশুশ্রমিক নিযুক্ত করলে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এ আইনের কতটুকু প্রয়োগ আছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। 

আশার কথা, সম্প্রতি দেশে ছয় খাতে শিশুশ্রম ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করতে সুপারিশ পেয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ঝুঁকিপূর্ণ খাতগুলো হচ্ছে- গৃহকর্ম, শুঁটকিপল্লী, পথশিশু, পাথর কুড়ানো বহন ভাঙানো, দর্জির কাজ এবং ময়লার ভাগাড়ে কাজ। দেশে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি খাত রয়েছে। এর মধ্যে আটটি খাতকে ইতোমধ্যে শিশুশ্রম মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছরের মধ্যে আরো কয়েকটি খাতকে শিশুশ্রম মুক্ত ঘোষণা করা হবে। পর্যায়ক্রমে সব খাতকেই দেশে শিশুশ্রম মুক্ত করা হবে।

ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসমে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পের চতুর্থ পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত এক লাখ শিশুকে প্রত্যাহার করে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা দেওয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের জন্য ১৮ মাসব্যাপী উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও ছয় মাস মেয়াদি দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ৯০ হাজার শিশু স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা শিশু শ্রমিকদের জন্য এমন আরো অনেক উদ্যোগ প্রয়োজন। 

আজকের শিশুরাই আগামী দিনে বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে। তাই তাদের সুষ্ঠু বিকাশ অপরিহার্য। তবে অনেক শিশুই প্রত্যাশিত জীবনের ছোঁয়া পায় না। অর্থনৈতিক চাপ ও পারিপার্শ্বিকতার প্রভাবে অল্প বয়সেই অভিশপ্ত শিশুশ্রমে যুক্ত হতে বাধ্য হয় তারা। যে বয়সে তাদের বই হাতে স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা যুক্ত হয় যাবতীয় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। অনেক সময় শিশুদের জোরপূর্বক এসব কাজে যুক্ত করা হয়। এর ফলে জীবনের শুরুতেই নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যু ঘটছে অনেকের।

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক শোষণের এক দীর্ঘস্থায়ী হাতিয়ার হলো শিশুশ্রম। আমরা জানি- অর্থনৈতিক শোষণ, সামাজিক বৈষম্য ও অস্থিরতা একইসঙ্গে কর্মহীনতার মতো দারিদ্র্য সৃষ্টিকারী শর্তগুলো শিশুশ্রমের জন্য দায়ী। আবার কিছু অভিভাবকের অসচেতনতা, নিজেদের অলসতা, নেশাগ্রস্ততা ও পারিবারিক কলহ শিশুদের এই পথে ঠেলে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে মালিক বা দালালদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ গ্রহণ করে অসচেতন অভিভাবক শিশুদের পাঠিয়ে দেয় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুরা শ্রমিক হিসেবে যুক্ত হয় অনানুষ্ঠানিক খাতে। এর ফলে তাদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো শ্রম সংক্রান্ত বিভিন্ন আওতার বাইরে থেকে যায়। তাতে সুবিধা হয় নিয়োগকর্তাদের। কারণ এই শিশুরা বাধ্যগত, নমনীয়, অসংগঠিত ও দাবি-দাওয়ার বিষয়ে অসচেতন। এই সুযোগে বড়দের কাজ তাদের মাধ্যমে করিয়ে নেয় মুনাফালোভী গোষ্ঠী, বিনিময়ে মজুরি দেয় যৎসামান্য। 

শিশুশ্রমিক হওয়া মানেই নতুন এক সম্ভাবনাময় মানবসম্পদ ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়া। শিশুশ্রম অসংখ্য শিশুর নিষ্পাপ শৈশব কেড়ে নিয়েছে। আমাদের দেশে প্রায় সর্বত্রই শিশু শ্রমিক পরিলক্ষিত হয়। আমাদের দেশে শিশুরা সাধারণত কৃষি, কল-কারখানা, গণপরিবহন, বাসাবাড়ি, খাবারের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ইটভাটা ও নির্মাণকাজে শ্রম বিক্রি করে থাকে। অনেক সময় মাদক বহন ও বিক্রির কাজেও শিশুরা ব্যবহৃত হয়। এর ফলে অন্ধকারে হারিয়ে যায় এই শিশুদের ভবিষ্যৎ। কর্মক্ষেত্রে নানাভাবে হয়রানি, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয় তারা। অসুস্থ হলে সামান্য চিকিৎসা সেবা পাওয়ার অধিকারও তাদের থাকে না। অনেক কন্যাশিশু অল্প বয়সেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয় শ্রমিক হওয়ার কারণে। এক পর্যায়ে এই শিশুদের অনেকেই মাদক গ্রহণ এমনকি কারবারি হয়ে পড়ে। এ ছাড়া নানাবিধ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

আমাদের দেশে শিশুশ্রম রোধে কঠোর আইন থাকলেও সেগুলো বাস্তবায়নে নেই কঠোরতা। আমাদের পেনাল কোডে বিভিন্ন ধারায় শাস্তি বিধানের ব্যবস্থা আছে। আছে শ্রম আইন, ন্যূনতম মজুরি আইন। এসব আইন কার্যকর থাকলে শিশুশ্রম প্রথা জিইয়ে থাকতে পারত না। কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি, শিশুদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা এবং সামাজিক বৈষম্য না কমলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা আরো আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে পারে।

শিশুর অধিকার নিশ্চিতে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু এখনো শিশুরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এবং বস্তি এলাকার শিশুরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত; যা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। 

ভবিষ্যতে সুন্দর ও মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্রের জন্য সব শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা কোনোভাবেই আগামী প্রজন্মকে এই বিপদে ফেলতে পারি না। সর্বশক্তি ব্যয় করে দারিদ্র্য ও শিশুশ্রমের এই দুষ্টচক্রকে ভাঙতে হবে।

দেশের শিশুশ্রম কমিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন সুনির্দিষ্টভাবে আইনের প্রয়োগ ও কঠোর শাস্তির বিধান। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে (১৯৮৯) স্বাক্ষরকারী ও অনুসমর্থনকারী প্রথম রাষ্ট্রগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। ১৯৯৪ সালে জাতীয় শিশুনীতি প্রণয়ন করা হয় বটে, কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, অসচেতনতা ও আইন প্রয়োগের দুর্বলতায় শিশুদের শ্রমে ঠেলে দিয়ে দেশ কখনো উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে না। শিশুশ্রম বন্ধে রাষ্ট্রকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

দারিদ্র্যের কশাঘাতে যে শিশু তার শৈশব বিক্রি করে উপার্জনের কঠিন পথে নিজেকে নিয়োজিত করছে, সে শিশুর কথা ভাবার সময় এসেছে। শিশুশ্রম নিরসনে প্রয়োজন সামাজিক উদ্যোগ ও সচেতনতা তৈরির আন্দোলন। এই শিশুদের মানসম্পন্ন এবং কর্মমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করলে তারাও আগামী দিনের সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। আশা করি একটি শিশুও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে এমনকি কাজেই যুক্ত হবে না। এমনটি ভাবার সাথে সাথে সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। তাতে করে একদিন এ দেশ এমনকি পৃথিবীটি শিশুর জন্য সাজানো বাগান হয়েও যেতে পারে। আশা নিয়েই ঘর করতে হবে আমাদের। 

সোহেলী চৌধুরী : সাংবাদিক; সাবেক জনকল্যাণ সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।   
আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
মার্কিন শ্রমনীতি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক অবস্থা তৈরি করতে পারে: পররাষ্ট্র সচিব
স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা-হয়রানি
একদিনে দশটি পথসভা, উঠান বৈঠক ও একটি জনসভা করেন সাজ্জাদুল হাসান এমপি
নতুন বছরে সুদহার বাড়ছে
শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখেই আজকের উন্নত বাংলাদেশ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
রাজপথের আন্দোলনে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে: মুরাদ
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকায় ইসলামী ব্যাংক
ইতিহাসের মহানায়ক: একটি অনন্য প্রকাশনা
নতুন বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
এক দিনে সারাদেশে ২১ নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft