শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
বিসিসির নির্বাহী প্রকৌশলীর সনদ ভুয়া: ফেঁসে যাচ্ছেন মোতালেব
নূরুজ্জামান মামুন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০২৩, ৭:৩৫ PM আপডেট: ২৩.০৫.২০২৩ ৭:৪১ PM
বেসরকারি আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু করেনি। অথচ বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মোতালেব হাওলাদার এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (সিভিল) পাস করার সনদ দিয়ে চাকরি করছেন। বিসিসির প্রকৌশল বিভাগের শীর্ষ পদে চাকরি করে ক্ষমতার দাপটে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। নামে-বেনামে গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি, গাড়ি। তার বিরুদ্ধে বরিশালের দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করার পর বেরিয়ে আসছে একের পর এক ভয়াবহ তথ্য। 

গত ১০ মে দুদক চিঠি দিয়ে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির কাছে মোতালেবের বিএসসি সনদের বিষয়ে জানতে চায়। গত ১৬ মে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শাহ গোলাম মুসা দুদকের চিঠির জবাবে বলেছেন, আবদুল মোতালেব হাওলাদার, পিতা- মো. ইয়াকুব আলী হাওলাদারের বিএসসি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে ভর্তি বা সনদ প্রাপ্তি সঠিক নয়। বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি বিজ্ঞান অনুষদের অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে কোনো শিক্ষা কার্যক্রম কখনই পরিচালিত হয়নি; সুতরাং আবদুল মোতালেব হাওলাদারের অর্জিত সনদ সঠিক নয়। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে করা যেতে পারে। এই চিঠি আজকালের খবরের কাছে রয়েছে। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মোতালেব হাওলাদার আজকালের খবরকে বলেন, ২০০৭ সালে আমি আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে বিএসসি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হয়ে ৬১ ক্রেডিট শেষ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে গেলে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি (আরএসটিইউ) থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছি। পাস করেছি বলেই তারা সার্টিফিকেট দিয়েছে। আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির চিঠির বিষয়ে তুলে ধরলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠির তথ্য সঠিক নয়; আমি ওখান থেকে ৬১ ক্রেডিট শেষ করার পর বাকি ক্রেডিট আরএসটিইউতে ট্রান্সফার করেছি। ক্রেডিট শেষ করার সার্টিফিকেট দিয়ে আরএসটিইউতে ভর্তি হয়েছি। আমার সার্টিফিকেট জাল নয়। 

প্রকৌশলী মোতালেব ২০০৭ সালে ৬১ ক্রেডিট আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি থেকে করার দাবি করলেও আরএসটিইউতে জমা দেওয়া জাল ট্রান্সক্রিপ্টে ২০১১ সালে সান্ধ্যকালীন কোর্সের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দুদকের বরিশাল অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ স্বাক্ষরিত চিঠিতে আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির কাছে জানতে চাওয়া হয়, ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সান্ধ্যকালীন কোর্স চালুর বিস্তারিত তথ্য।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি সনদ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগের কারণে বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। পরে উচ্চ আদালতের আদেশ নিয়ে বর্তমানে কোনো রকম টিকে আছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে মোতালেবের সনদটি জাল বলে লিখিতভাবে দুদককে জানিয়েছে। এছাড়া দুদক মোতালেবের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের বিষয়েও তদন্ত করছে। অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের তথ্য দুদক পেয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। সব মিলিয়ে ফেঁসে যাচ্ছেন দুর্নীতিবাজ মোতালেব।  

বিসিসির চাকরির বিধি অনুযায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পেতে হলে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা এবং কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক পাসের সনদ থাকতে হবে। তবে আবদুল মোতালেব হাওলাদারের কোনোটিই ছিল না। তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির জন্য আরএসটিইউ থেকে জাল বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাসের সনদ জমা দেন। ক্ষমতার দাপটে ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু সনদটি জাল বলে তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনিচুজ্জামন সিটি করপোরেশনের মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করনে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলে। ইউজিসি তিন সদসের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করে। কমিটি ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। 

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইউজিসি ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটিকে চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেয়। কিন্তু আবদুল মোতালেব ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর স্নাতক সনদ নেন। জালিয়াতি করে চার বছরমেয়াদি সনদ দেওয়া হয়েছে মাত্র এক বছর পাঁচ মাসে। 

বিসিসি সূত্রে জানা গেছে, ইউজিসির প্রতিবেদনটি জানাজানি হলে ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই নির্বাহী প্রকৌশলী পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে সংযুক্ত রাখা হয়। এর আগে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহণের পরই দুর্নীতি ও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সনদ জাল করার অপরাধে আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ওএসডি করে রাখা হয়। পরে তাকে অন্য বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। কিছু দিনের মধ্যেই মেয়রকে ম্যানেজ করে আগের চেয়ারে ফিরেন।  

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা মো. আহসান হাবিব কামাল মেয়র থাকাকালীন বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। যার সহযোগিতায় ছিলেন প্রকৌশলী আবদুল মোতালেব হাওলাদার। মোতালেব ঠিকাদারদের অবৈধভাবে কাজ দেওয়াসহ নিম্নমানের কাজ করার সুযোগ দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বরিশাল নগরীতে বহুতল আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। নামে, বেনামে ঢাকায় ফ্ল্যাট, কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন জায়গায় জমি কিনেছেন। অবৈধভাবে জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুদক তদন্ত করছে।

আজকালের খবর/ওআর








সর্বশেষ সংবাদ
মার্কিন শ্রমনীতি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক অবস্থা তৈরি করতে পারে: পররাষ্ট্র সচিব
স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা-হয়রানি
একদিনে দশটি পথসভা, উঠান বৈঠক ও একটি জনসভা করেন সাজ্জাদুল হাসান এমপি
নতুন বছরে সুদহার বাড়ছে
শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখেই আজকের উন্নত বাংলাদেশ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
রাজপথের আন্দোলনে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে: মুরাদ
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকায় ইসলামী ব্যাংক
ইতিহাসের মহানায়ক: একটি অনন্য প্রকাশনা
নতুন বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
এক দিনে সারাদেশে ২১ নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft