শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
সুবিধাবঞ্চিতদের পাশে আইডিএস
জীবন স্বপ্ন দেখার, যুদ্ধ করে তা বাস্তবায়ন করার: অনিকা ইয়াসমিন
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: আনোয়ার সাদাত সবুজ
প্রকাশ: রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:২১ PM আপডেট: ০৫.০২.২০২৩ ৮:৩৯ PM
স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক প্রতিষ্ঠান ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (আইডিএস) প্রেসিডেন্ট অনিকা ইয়াসমিন। এটুকুতে তার সামাজিক একটি প্রেক্ষাপট ধরা পড়বে। তবে তিনি কী এবং কী করেন তার সবিস্তার বলা হবে না। তিনি সবকিছু করেন। মানুষের মনের হাসি তিনি উপভোগ করেন। তিনি তার জন্য সাধ্যসীমায় সব করেন। প্রকৃত অনিকা নিজেও রাজ্যের সুখ পান তার এমন মহৎ কর্মকাণ্ডে। এতে করে সামাজিক পরিমণ্ডল উপকৃত হয়। উপকৃত হন বানভাসি, আরো হন এতিম-অনাথ শিশু, অবহেলিত জনপদের রোগাক্রান্তরা। মোটকথা বঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অনিকা ইয়াসমিন। সম্প্রতি আজকালের খবরের সঙ্গে কথা বলেছেন সংগ্রামী এই নারী উদ্যোক্তা।

আইডিএস শিশু, নারীসহ সমাজের অবহেলিত মানুষদের নিয়ে কাজ করে। এ ছাড়া দেশের নানা দুর্যোগে সহায়সম্বলহীনদের পাশে দাঁড়ান এর কর্মীরা। আর এসবের পেছনে মূল ভূমিকাটি পালন করেন সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট অনিকা। তিনি অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে এখন স্বাবলম্বী নারী। সমাজের অবহেলিত ও অসহায় নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কখনো মনে করার কোনো কারণ নেই আমার জীবন থেমে গেছে অর্থাৎ শেষ। আমার বিয়ে হয়ে গেছে, বাচ্চা হয়ে গেছে; এখানেই আমার জীবন শেষ মনে করার কারণ নেই। আসলে ভাবতে হবে, আমার অনেক কিছু করার আছে। জীবনে স্বপ্ন দেখার আছে। একইসঙ্গে যুদ্ধ করে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করারও আছে। মেয়েদের ছোট ভাবার কিছু নেই। যুদ্ধ করেই এগিয়ে যেতে হবে। 

তিনি নারী, শিশু ও মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। তিনি বলেন, আমার সফলতা এখানেই, আমি একজনের হলেও পাশে দাঁড়াতে পেরেছি। তিনি একজন নারী ও তার গর্ভের শিশুকে বাঁচানোর গল্প শোনান। গল্পটি এমন- একটি পরিবারে একটি নারী গর্ভধারণ করেন। কিন্তু শ্বশুরপক্ষের মানুষরা চান গর্ভের সন্তানটি নষ্ট করে ফেলতে। অসহায় ওই নারীটি যেকোনো মাধ্যম হয়ে আসেন অনিকার কাছে। অনিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা শিশুটির দায়িত্ব নেওয়ার মানুষ বের করেন। নারীটির অস্ত্রোপচার হয়। শিশুটি বেঁচে যায়। একটি প্রাণ রক্ষার বিনিময়ে অনিকা জীবনের সার্থকতা খোঁজেন। 

তিনি জীবনের শুরুর কথা বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল মিডিয়ায় কাজ করার। বাবা বললেন তুমি এনজিও করো। দেশ-বিদেশে ঘুরবা। মানুষের জন্য কাজ করবা। আমারও এনজিওর প্রতি দুর্বলতা ছিল। চিন্তা ছিল এমন একটি পেশায় যাই, যেখানে গেলে নিজের জন্যও কিছু করতে পারব, আমাদের মতো মেয়েদের জন্যও কিছু করতে পারব। 

এমন ভাবনা থেকেই অনিকা এনজিও শুরু করলেন। এখন তার এনজিও থেকে নারী-শিশু ও অবহেলিত মানুষকে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। অনিকা বলেন, গর্ভবতী নারীদের আমরা ফ্রিতে ওষুধ দিয়ে থাকি, পুষ্টিকর খাবার দিয়ে থাকি। পথশিশুদের জন্য আমরা স্কুল করেছি। কোভিড বিষয়ে মানুষকে সচেতন করি আমরা। নিয়মিত আমরা ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প করে থাকি। এই তীব্র শীতে অসহায়দের পাশে শীতবস্ত্র পৌঁছে দিয়েছি সংগঠনের পক্ষ থেকে। 

প্রশান্তি নিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করে যাওয়া, এই আনন্দের ওপরে কিছু থাকে না। তিনি আগামীর পরিকল্পনার কথাও শোনান। সরকারের কাছে একটি প্রজেক্ট জমা দেওয়া আছে। সেটি পাস হয়ে গেলে অনিকা উদ্যোক্তা তৈরি করবেন বলে জানান। তিনি বলেন, উদ্যোক্তা হয়ে উঠলে যে কেউ নিজেদের কর্মসংস্থান নিজেরাই তৈরি করতে পারবেন। শুধু মেয়েরাই নন, বেকার যুবকরাও যেন কাজ পান সেই ব্যবস্থা করা হবে। অনিকার এনজিওটি ময়মনসিংহ অঞ্চলে মূল কাজটি করে। এর পরিধি বাড়ানোর উপায়ও খুঁজছেন তিনি। দেশি-বিদেশি সহায়তা পেলে আইএসডি বিস্তৃত হবে। তিনি বলেন, ঢাকার বাইরের অঞ্চলগুলোতে দক্ষ কর্মী পাওয়া যায় না। ওইসব অঞ্চলে দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা হলে তারা স্থানীয়ভাবে কিছু করে খেতে পারবেন।  
অনিকার এ পর্যায়ে উঠে আসা সহজে নয়। তা রীতিমতো সিনেমার কাহিনীকে হার মানায়। তিনি জানান, অল্প হলেও সাহায্যের কিছু হাত পেয়েছেন। বর্তমানে অনিকাও অনেকের সাহায্যের হাত। 

কথিত অভিজাত কারো ঠুনকো কথায় জীবনে ভুল সিদ্ধান্ত না নিতে অনিকা নারীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যারা আমার মতো বোকা তাদের বলব, বাবা-মায়ের সঙ্গে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে, অন্য কারো হাত ধরে জীবনকে রঙিন মনে করবেন না। মুখরোচক কথা বলে জীবন চলে না। জীবনে কঠিনতর সময়ের মুখোমুখি হতে হয়। স্বল্প পরিচয়ে কারো কথার ওপর নির্ভর করে কেউ কখনো কোনো সম্পর্কে এগুবেন না। সর্বোপরি বাবা-মায়ের কথার বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।

নারী অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে প্রবেশ করেছি। কিন্তু আদৌ সমাজে নারী অগ্রগতি তেমনভাবে হয়নি। আমাদের সমাজ এখনো মেনে নিতে পারেনি।

অনিকা বলতে থাকেন তার সুখ-দুঃখের গল্প। সুখগুলো মানুষকে সাহায্য করার। আর দুঃখগুলো নানা সামীবদ্ধতার আর বঞ্চিত মানুষের গাথা। সুখের বিষয় অনিকার বঞ্চিত মানুষরা সমাজের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। তারা হতে পারে এতিম শিশু। আনিকা উদ্যোগী হয়ে যাদের জন্মদিন পালন করেন। হতে পারে নাগরিক রিকশাওয়ালা; অনিকা তার সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নেন। হতে পারে বানভাসি; আনিকা যাদের দুঃখ বুঝবেন বলে পানিতে নেমে পড়েন সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে। অনিকা মানুষের মৌলিক চাহিদার অনেক কিছুই পূরণের প্রচেষ্টা চালান তার সংগঠনের মাধ্যমে। তিনি চান সমাজ বদল হোক। মানুষের ভাগ্য বদলে যাক। চারপাশে দেখা হোক অগুনতি হাসি মুখের। 

আইডিএসের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন- ময়মনসিংহ সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক ফাইজুল হক রাজ ও সাংবাদিক আনোয়ার সাদাত সবুজ।

অনিকা ইয়াসমিনের সারথী হিসেবে আরো আছেন সংগঠনের সহসভাপতি কাজী রিয়াদ, সাধারণ সম্পাদক তন্ময় শাহারিয়ারসহ একদল উদ্যোমী ও পরিশ্রমী তরুণ-তরুণী।

আজকালের খবর/ওআর








সর্বশেষ সংবাদ
মার্কিন শ্রমনীতি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক অবস্থা তৈরি করতে পারে: পররাষ্ট্র সচিব
স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা-হয়রানি
একদিনে দশটি পথসভা, উঠান বৈঠক ও একটি জনসভা করেন সাজ্জাদুল হাসান এমপি
নতুন বছরে সুদহার বাড়ছে
শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখেই আজকের উন্নত বাংলাদেশ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
রাজপথের আন্দোলনে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে: মুরাদ
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকায় ইসলামী ব্যাংক
ইতিহাসের মহানায়ক: একটি অনন্য প্রকাশনা
নতুন বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
এক দিনে সারাদেশে ২১ নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft