বিএফডিসির জৌলুসের সময় গেটের কাছে ঘেঁষতেই দারোয়ানের ভয়ে তটস্থ থাকতো দর্শনার্থীদের। এখন আগের সেই জৌলুস নেই, তবে আছে কনটেন্টের উপযুক্ত বিতর্কিত সব উপাত্য। আর সেই উপাত্য সংগ্রহে অনেকেই বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ান। প্রযুক্তির কল্যাণে হাতের মুঠোয় সেল ফোনে ধারণ করে ছেড়ে দেন নিজেদের মতো করে শিরোনাম দিয়ে। ইউটিউবারদের সঙ্গে বিভিন্ন সমিতির লোকজনের সখ্যতার অভিযোগও পাওয়া গেছে। আর এসব কারণে দীর্ঘদিন এফডিসিপাড়ায় ঢোকেন না দেওয়ান নজরুল, বজলুর রাশেদ চৌধুরী, এম এন ইস্পানিসহ অনেকেই। শিল্পী সমিতির কার্যকরী সদস্য ও সিনিয়র অভিনেত্রী অঞ্জনা, অরুনা বিশ^াসরাও বিরক্ত এই ইউটিউবারদের দৌরাত্মে।
এফডিসিতে ইউটিউবারদের উপস্থিতি নতুন কিছু নয়। এর আগেও শিল্পী ও কুশলীদের হেয় করেছেন কিছু কিছু ইউটিউবার। তবে এদের এফডিসিতে প্রবেশের বিষয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে কতিপয় প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পীরাই দায়ী! অভিযোগ প্রতিপক্ষকে হেয় করতে নিজেরাই ইউটিউবারদের এফডিসিতে প্রবেশ করান।
অধিক ভিউয়ের আশায় মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে এফডিসি ও শিল্পীদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে অনেক ইউটিউবার! এফডিসিতে বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধে অসংখ্যবার খবর প্রকাশ হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে ‘কিছু হাতে ধরিয়ে’ ভেতরে প্রবেশ করেন এইসব ইউটিউবার।
সর্বশেষ প্রযোজক সমিতির সঙ্গে মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানের দ্বন্দ্বে এটা দৃশ্যমান হয়েছে। এফডিসিতে ঢুকে শিল্পী ও কুশলীদের অশ্রাব্য ভাষায় তুলোধুনো করে ইউটিউবারা।
এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দোস্ত দুশমন’খ্যাত পরিচালক দেওয়ান নজরুল। বলেন- যেখানেই যাই ইউটিউবে এফডিসিতে ভুইঁফোড় কিছু লোকজন কথা বলছে। মনে হয় তারাই ইন্ডাস্ট্রির সবকিছু। এরা যে বলে যাচ্ছে অবিরাম তাদের থামানোর কেউ নেই। কেউ থামাচ্ছে না। এর কারণ কী? তিনি বলেন, এখানে এখন কেউ কাউকে সম্মান দেন না। যেখানে সম্মান পাই না সেখানে গিয়ে অসম্মানিত হওয়ার দরকার কী?
পরিচালক বজলুর রাশেদ চৌধুরী বলেন- আমি দীর্ঘ পাঁচ মাস হয় এফডিসি যাই না। অথচ আমার জীবনের অর্ধেক সময় সেখানেই কেটেছে। এখনো সেখানকার মানুষগুলোর সঙ্গে আমার ওঠাবসা। কিন্তু যেভাবে ভিউয়ের আশায় যাচ্ছেতাই লোকজন ইউটিউবে অপ্রকাশযোগ্য কথাবার্তা বলে বেড়ান তা শুনে রুচিতে বাধে, তাই প্রয়োজন ছাড়া যাই না। তিনি বলেন, এদের এখনই সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে। এ ব্যাপারে সাংবাদিক ভাইয়েরা আশা করছি উদ্যোগ নেবেন।
অপরদিকে পরিচালক এম এন ইস্পাহানি বলেন, মন চাইলেই এফডিসিতে গিয়ে আড্ডা মারতে পারি না। যেখানেই যাই ইউটিউবারদের দৌরাত্ম। গেলেই কেউ না কেউ এসে বুম ধরে বসে বিব্রতকর বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে বসে। কোনো সেন্সর নেই। যদিও অনেকে সাক্ষাৎকার দিয়ে নিজেকে বিজিত ভাবছেন। সত্যি বলতে এরা পরিচালক সমিতি, প্রযোজক, শিল্পী সমিতি সবার মধ্যে বিদ্যমান। সম্প্রতি মৌসুমী ইস্যুতে এদের কয়েকজন যে ভাষায় ইউটিউবে অশালীন কথাবার্তা ছড়িয়েছেন তাতে করে বাড়িতেও কথা শুনতে হচ্ছে আমাদের। অথচ আমাদের সমিতিগুলো নিশ্চুপ। এফডিসি কর্তৃপক্ষ চোখ বুঁজে আছে। তাই খুব কাজ না থাকলে ওমুখী হই না।
সিনিয়র অভিনেত্রী অঞ্জনা বলেছেন- সত্যি বলতে আমি মহাবিরক্ত। আজকে (মঙ্গলবার, বিকাল চারটায়) আমাদের শিল্পী সমিতির মিটিং ছিলো। যেতে পারিনি; তবে, যুগ্ম মহাসচিব সাইমন সাদিককে ফোনে বলেছি শিল্পী সমিতির তিন সদস্য (সাদিয়া মির্জা, মিজান এবং জামাল পাটোয়ারী) ইন্ডাস্ট্রিকে সমাজ জঘন্যভাবে হেয় করেছে। একজন শিল্পী হিসেবে আমিও অপমানিত হয়েছি। রাস্তাঘাটে কথা শুনতে হয়। এদের ব্যাপারে সমিতি যেন কঠোর অবস্থান নেয়। শিল্পী সমিতি কেন এসব জঘণ্যদের আশ্রয় দিয়ে বিতর্কিত হবে?
অরুনা বিশ্বাস বলেন- জাতির জনকের হাতে গড়া এফডিসিকে যখন একদল অদম্য মেধাবীরা নিজেদের সৃষ্টি দিয়ে কোটি কোটি দর্শক তৈরি করে গেছেন, তখন সেই কোটি কোটি দর্শকদের অশ্রাব্য ভাষায় গুটি কয়েক লোক আমাদের শিল্পীসহ নানা প্রসঙ্গে অপ্রকাশযোগ্য ভাষায় টেনে কথা বলে পূর্বপুরুষদের অপমান করে নিজেদের গর্বিত ভাবছেন। আর আমরা দেখেও না দেখার ভান করছি। কানাডায় গেছি সেখানেও এসব নিয়ে অসংখ্যবার প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি। এতে করে দিন দিন এসব ইউটিউব বক্তারা যেমন ব্যস্ত তখন প্রকৃত শিল্পীরা একটু সম্মান পাওয়ার আশায় এফডিসি থেকে দূরে। এরা সমিতির নামধারী কিছু অসাধু। যাদের উদ্দেশ্য বেফাঁস কথা বলে ভিউ বাড়িয়ে টাকা ইনকাম করা। এই দুষ্টুদের অবশ্যই এফডিসি থেকে বের করে দিতে হবে।
আজকালের খবর/আতে