বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪
প্রিন্ট সংস্করণ
সব চলে সিস্টেমে: অজুহাত হাজারো
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১, ১:৪৫ AM

শত কাজের অজুহাতে কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যে ঘর থেকে বের হয়েছে সাধারণ মানুষ। বিভিন্নজন চলছেন বিভিন্ন সিস্টেমে।
তবে এ সিস্টেম পুলিশের হাতে টাকা গুঁজে দেওয়ার সিস্টেম নয়-এটা হল চেকপোস্টের আগে যাত্রী নামিয়ে চোকপোস্ট পার হয়ে আবার তোলা। এছাড়া চেকপোস্ট আছে-এমন সড়ক এড়িয়ে অলি-গলি দিয়ে চলছে মোটরবাইক। ভাড়ায় চলা এসব মোটরবাইকের মতো হাজারো অজুহাতে অন্যান্য প্রাইভেট গাড়িও চলছে যাত্রীর খ্যাপ নিয়ে। নিরুপায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, সবাই কাজে যাচ্ছে। আমরা ১০০ গাড়ি থামালেও কাউকে আটকাতে পারছি না। গাড়ি ইশারা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে কেউ বলেন ব্যাংকে যাচ্ছি, হাসপাতালে যাচ্ছি, টিকা দিতে যাচ্ছিসহ নানা বিষয়। কাউকে আটকে রাখার সুযোগ নেই। প্রথম দিন আমরা ডাক্তার বা হাসপাতাল রিলেটেড ছাড়া কাউকে যেতে দেইনি। আর আজ যুক্ত হয়েছে ব্যাংক। নিশ্চয়ই একদিন পরে আরো কোনো না কোনো কিছু যুক্ত হবে এই কাতারে। এভাবেই বাড়তেই থাকবে রাস্তাঘাটে গাড়ি ও মানুষের সংখ্যা।
রাসেল স্কয়ার মোড়ে দায়িত্ব পালন করা ধানমন্ডি ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট মোহাম্মদ সাদ্দাম বলেন, আজ (গতকাল রবিবার) ব্যাংক খোলা, রাস্তায় অনেক গাড়ি। প্রতিটি গাড়িতে থাকা মানুষ কোনো না কোনো কাজে যাচ্ছে। ডাক্তার, নার্সরা তো আছেনই, এর বাইরে কেউ হাসপাতালে রোগী দেখতে, খাবার দিতে যাচ্ছেন। অন্যদিকে কেউ ব্যাংকে টাকা জমা দিতে বা উঠাতে যাচ্ছেন। শত মানুষ শত কাজে বের হয়েছেন।
এদিকে রাজধানীর শাহবাগের চেকপোস্টে ম্যাজিষ্ট্রেট, র‌্যাব এবং পুলিশের উপস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কঠোর মনিটরিং চলছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যানবাহন নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছে কি না, মাস্ক পরিধানসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষ রাস্তায় চলাচল করছে কি না তা কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে যানবাহন ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
ঈদের ছুটি শেষে গতকাল ব্যাংক, বীমা ও শেয়ারবাজারের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা গত দুদিনের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
নগরীর উত্তরা বিমানবন্দর সড়ক, গুলশান, বনানী, মহাখালি, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, জিগাতলা, সিটি কলেজ মোড়, রাসেল স্কয়ার মোড় এলকায় দেখা গেছে চেকপোস্টগুলোতে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন ঠিকই, তবে রাস্তায় চলছে শত শত গাড়ি। ব্যক্তিগত অনেক গাড়িতে চিকিৎসক, নার্স, ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চলাচল করলেও বহু মানুষ রাস্তায় বের হয়েছেন অপ্রয়োজনেই। তবে অজুহাত অতীব প্রয়োজনীয়।  আরেক জনের সঙ্গে ভাড়া ভাগাভাগি করে মোহাম্মদপুর থেকে রিকশায় যাচ্ছিলেন আরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, আমি জিগাতলায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করি। রিকশা ভাড়া বেশি ও পাশের ব্যক্তির গন্তব্য একই হওয়ায় আমরা শেয়ারে যাচ্ছি। মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড ও শংকর বাস স্ট্যান্ডে দেখা গেছে কয়েকজন ব্যক্তি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছেন। বিধি-নিষেধে মোটরসাইকেলে দুইজন চলাচল নিষেধ, তবুও কি করে যাত্রী পরিবহন করেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের ওই চালক বলেন, ভাই, সব কিছু সিস্টেমে চলে। চেকপোস্টের আগে আমরা যাত্রীদের নামিয়ে দেই। আবার চেকপোস্ট পার হয়ে তাদের তুলি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চেকপোস্টের এড়িয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যাই। আমাদের সঙ্গে পেট আছে, পুলিশ তো আমাদের খাবার দিচ্ছে না। নিজের খাবারটা নিজেকে জোগাড় করে খেতে হচ্ছে। তাই ফাঁকি দিয়ে হলেও নিজের পেট চালানোর চেষ্টা করছি।
শাহবাগ এলাকায় সকাল থেকে পুলিশের অপরাধ ও ট্রাফিক বিভাগ চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসুর নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় শাহবাগ অভিমুখে আসা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, জিপ, মোটরসাইকেল ও রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে তাদের বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। শাহবাগ এলাকার আশপাশে কয়েকটি হাসপাতাল থাকায় অনেকেই হাসপাতালে এসেছেন বলে জানান। কেউ আবার ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানে কাজে যাচ্ছেন বলে জানান।
ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে যারা বের হয়েছেন তারাও নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে বলে জানান। তবে কেউ কেউ জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছেন বললেও এর পক্ষে প্রমাণ দেখাতে না পারায় তাদের জরিমানা করা হয়।
এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘লকডাউন চলাকালে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়া যাবে না এমন নির্দেশনা থাকলেও অনেকে বের হচ্ছেন। কাপ্তানবাজার থেকে ধানমন্ডিতে মাছ নিয়ে যাচ্ছেন। কখন বাজার খোলা থাকবে, কতক্ষণের জন্য খোলা থাকবে তা নির্দেশনায় বলা রয়েছে। জরুরি এ মুহূর্তে কাপ্তানবাজার থেকে মাছ নিয়ে কেন ধানমন্ডিতে যেতে হবে?’
অপরদিকে জীবিকার প্রয়োজনে অনেকে রাস্তায় বের হয়েছেন তারা বলছেন, সরকার বিধি-নিষেধ দিয়েছে, তারাও এর পক্ষে। কিন্তু তাদের পেট চলবে কীভাবে? সংসার চলবে কীভাবে? সরকারের কোনো সাহায্য তাদের কাছে যাচ্ছে না। তারা বাধ্য হয়ে রাস্তায় আসছেন। শনির আখড়া আন্ডার পাসের ওপরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢালে গাড়িতে করে মাস্ক বিক্রি করছিলেন শাহজাহান মিয়া। তিনি বলেন, ‘ঝুঁকি নিয়া বাইর হইছি ঠিকই, বিক্রি কই! মানুষ নাই বেচমু কার কাছে? আবার না বাইরাইয়াও তো উপায় নাই। সংসার চলব কেমনে?’
এই মহাসড়কের ঢালে ইজিবাইক নিয়ে সাইনবোর্ডের যাত্রী ডাকছিলেন চালক মো. হাসান। তিনি বলেন, ‘আমার দুই ছেলে, এক মেয়েসহ পাঁচ জনের সংসার। বিধি-নিষেধের কারণে বড় বিপদে পইড়া গেছি পরিবার নিয়া। ধার-দেনা কইরা কোনো রকম সংসার চালাইতাছি।’ হাসান আরো বলেন, ‘হাইওয়েতে ইজিবাইক চালানো নিষেধ। তারপরও যাত্রীর আশায় আইছি। যেকোন সময় পুলিশে ধরতে পারে। ভয়েই অস্থির হয়ে আছি, কী যাত্রী ডাকুম। পুলিশ দেখলে রাস্তা থুইয়া চিপা-চাপায় ঢুকাইয়া দেই।’
ভ্যানে মালামাল পরিবহন করেন আজহার উদ্দিন। তিনি জানান, লকডাউনে কাজ নেই। ভ্যানে এখন মালপত্রের পরিবর্তে মানুষ বহন করছেন। শনির আখড়া থেকে মাতুয়াইল মেডিক্যাল এলাকায় যেতে ডেকে ডেকে ভ্যান ভর্তি করে ফেলেছেন যাত্রীতে।
আজহার উদ্দিন বলেন, ‘সরকার তো লকডাউন দিয়াই খালাস। আমাগো জন্য কী করল, আমাগো প্যাটে তো ভাত নাই। বাচ্চা-কাচ্চা আছে, মা-বাপ আছে। কাম করতে না পারলে কী খামু আমরা! সরকারের সাহায্য-সহযোগিতা তো দূরের কথা একটা দানা পর্যন্ত এহনও পাই নাই।’ ধীরে ধীরে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন শফিকুল। যেতে যেতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কারো চোখে চোখ পড়লেই ইশারা করছিলেন- ‘যাবেন কি না’। শফিকুল বলেন, ‘বাইক চালিয়ে ভালই চলছিলাম। করোনার কারণে সব আউলাঝাউলা হয়ে গেছে। আমার একটা ছোট বাচ্চ আছে, স্ত্রী আছে। ঝুঁকি, বিপদ জেনেও বাধ্য হয়ে বাইর হইছি। দুজন নিয়া চালানো যায় না। যাত্রী টানতাছি বুঝতে পারলে কোনো কথা ছাড়াই মামলা দিব পুলিশ।’

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ায় গত কয়েক মাস ধরে বিধি-নিষেধ আরোপ করে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সরকার। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আটদিনের জন্য শিথিল করা হয়েছিল বিধিনিষেধ। এরপর আবার গত শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর বিধি-নিষেধ দিয়েছে সরকার।
বিধি-নিষেধের মধ্যে বন্ধ আছে সব ধরনের গণপরিবহন, সরকারি ও বেসরকারি অফিস এবং শিল্পকারখানা। বন্ধ রয়েছে দোকান এবং শপিংমল। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষের বাইরে বের হওয়া নিষেধ।









সর্বশেষ সংবাদ
নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিজ্ঞানী ও কৃষি শ্রমিকদের অবদান রয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
ভোটের প্রচারণায় এগিয়ে মনোজ বৈদ্য
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগে সমতা চায় টিআইবি
স্বাগতম ২০২২, বিদায় ২০২১
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি সুন্দরবন
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সুবাহর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন
তাদের মাখো মাখো ‘প্রেমের প্রাসাদ’!
‘আমাকে জায়গা দিন, এটা আমার প্রাপ্য’ : লালকেল্লার দাবিদার মোগল সম্রাজ্ঞী
চা দোকানিকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা
ভোটের প্রচারণায় এগিয়ে মনোজ বৈদ্য
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft